মেঘনা নদীর তীরবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর গ্রাম। পুরো গ্রামেই সাত-আট ফুট উঁচু বাঁশের মাচা দেখা যায়। এগুলো শুঁটকি শুকানোর মাচা। দেশের বিভিন্ন জেলায় এখানকার শুঁটকির বেশ চাহিদা রয়েছে। ভারতসহ কিছু দেশে রপ্তানিও হয়ে থাকে লালপুরের শুঁটকি। এখানে বছরে সাধারণত ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়ে থাকে। এ বছর অবশ্য ১০০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, শুঁটকি সংরক্ষণাগার থাকলে উৎপাদন ও বিক্রির পরিমাণ বাড়ত।
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জের লালপুর গ্রামে মেঘনার পাড়ে বর্তমানে ২৬টি মাচা রয়েছে, যেটাকে স্থানীয় লোকজন বলেন ডাঙ্গি। তাঁদের দাবি, গোটা গ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক ডাঙ্গি রয়েছে। এসব ডাঙ্গিতে ৪০০ থেকে ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। ২০ আড়তদারসহ প্রায় ১৫০ জন এখানে শুঁটকির ব্যবসা করেন।
সরেজমিনে গিয়ে আলাপকালে গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, লালপুরে প্রায় ১০০ বছর ধরে শুঁটকির ব্যবসা হচ্ছে। লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদ মিয়া মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বর্তমান বয়স ৭০ বছর। জন্মের পর থেকেই এই ব্যবসা দেখে আসছি। এই ব্যবসা শত বছরের পুরোনো। প্রতিবছরই এখানে ১৫০ কোটি থেকে ২০০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়।’
লালপুরে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলে। এখানে দুই ধরনের শুঁটকি তৈরি হয়। ভেজা শিঁদল (চ্যাপা) ও শুকনা শুঁটকি। এর মধ্যে রয়েছে লবণযুক্ত ও লবণ ছাড়া শুঁটকি। গুণে–মানে ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় লালপুরের শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা জানান, তিতাস, মেঘনা নদীসহ আশপাশের বিভিন্ন বিলে ধরা পড়া টাকি, শোল, চান্দা, পুঁটি, সরপুঁটি, বোয়াল, বাইম, কাচকি, মলা, ঢেলা, চাপিলা, খলশে, কাইক্কা, ট্যাংরা, গজার, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ এনে এখানে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন ভোরে শুঁটকি উৎপাদনকারীরা তিতাস ও মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন বাজার থেকে নানা প্রজাতির মাছ কিনে আনেন। এরপর মাচার নিচেই সে মাছ কেটে ও পরিষ্কার করে শুকাতে দেওয়া হয়।