জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন (Cervarix) ও দেশে নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি (GeneVac-B) ভ্যাকসিন আমদানি করে কয়েকটি জেলার বিভিন্ন স্কুলে ক্যাম্পেইন করে কিশোরীদের পুশ করত একটি চক্রের সদস্যরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
হারুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি কাঁচামাল আমদানি করে নিজেরাই মানহীন টিকা তৈরি করত। এরপর রাজধানী ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিজেদের তত্ত্বাবধানেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিশোরী শিক্ষার্থীদের শরীরে পুশ করা হতো। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অভিযানে বিপুল পরিমাণ নকল টিকাসহ যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া দুই ধরনের টিকার বাজারদর আনুমানিক প্রায় ৬০ লাখ টাকা।
অভিযানে চক্রের সক্রিয় সদস্য সাইফুল ইসলাম শিপন (২৬), মো. ফয়সাল আহম্মেদ (৩২), মো. আল-আমিন (৩৪), মো., নুরুজ্জামান সাগর (২৪) ও মো. আতিকুল ইসলামকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, দেশে নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস-বি ও জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেন সাইফুল ইসলাম শিপন। এরপর সেগুলো কেরানীগঞ্জের হিমেলের কারখানায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তারা আমদানি করা একেকটি পণ্য দিয়ে নকল ১০টি টিকা তৈরি করে। আর একেকটি টিকা আমদানি করেন মাত্র সাড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে। আর নকল টিকা তৈরি করে প্রতিটি আড়াই হাজার করে মোট ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করেন।
এই চক্রটি টঙ্গী, গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডা. এ আর খান ফাউন্ডেশন, আল নুর ফাউন্ডেশন ও পপুলার ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকা ক্যাম্পেইন করে বিক্রি করত। এই সকল টিকা মানুষের শরীরে পুশ করায় মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি করছে। অন্য দিকে মাত্র সাড়ে ৩০০ টাকার টিকা ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করত।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, অভিযানে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা এই সকল নিষিদ্ধ টিকা আমদানি করে দীর্ঘদিন ধরে নিজেরাই বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে আসছিল। এমনকি চক্রটি এই সকল ফাউন্ডেশনকে ব্যবহার করে গাজীপুর, টঙ্গী ও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন করে টিকি দিত। তারা গত দুই বছরে অন্তত ৬ হাজার কিশোরীকে এই টিকা দিয়েছে। প্রতিটি কিশোরীকে তারা তিনটি টিকা দিত। তারা বোঝাত জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধে তিনটি টিকা দিতে হবে। এ জন্য তারা প্রতিটি টিকা আড়াই হাজার করে সাড়ে সাত হাজার করে টাকা নিয়েছে। আমরা এই চক্রে জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি তাদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পেইন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা যাদের গ্রেপ্তার করেছি তাদের আগে রিমান্ডে আনব। তাদের কাছ থেকে আগে জানতে হবে এই সকল ফাউন্ডেশনগুলো চক্রটির সঙ্গে কিভাবে কাজ করত। তাদের নকল টিকার ক্যাম্পেইন করা অপরাধ আর তারা দুই বছর ধরে এই কাজটি করে আসছিল। আমদানি ও ক্যাম্পেইনের পেছনে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হবে।’