অফিস বা সংসার সামলাতে গিয়ে কাজের ভারে যখন ক্লান্ত মন, তখন শুধু মনে হয় কেউ যদি চুলে একটু তেল দিয়ে দিত বা মাথায় একটু ম্যাসাজ করে দিত। ছোট বা বড় সবধরণের পারলারে হরহামেশাই এখন জনপ্রিয় হচ্ছে এই ওয়েল ম্যাসাজ। পারলার গুলোতে গেলেও শোনা যায়, এই তো খুব ক্লান্ত তাই একটু ওয়েল ম্যাসাজ নিতে এলাম। এখন প্রশ্ন হলো আসলেই কি এই ওয়েল ম্যাসাজে ক্লান্তি দূর হয় নাকি এটা মনের একটা বিশ্বাস যে ম্যাসাজ নিলেই দূর হবে সব ক্লান্তি।
হারমোনি স্পার রূপ বিশেষজ্ঞ রহিমা সুলতানা রীতা বলছিলেন, মাথায় তেল ম্যাসাজের ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এতে করে মাথার ভেতরে অক্সিজেন আসা-যাওয়া করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় শরীরে থাকা টক্সিন বের হয়ে যায়। আর হরমোন নিঃসরণের ফলে মনটাও ফুরফুরে হয়ে ওঠে। মাথায় ম্যাসাজের সঙ্গে মন ভালো থাকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এটা।
এখন কেমন হবে ম্যাসাজের ধরন সেটাও জেনে রাখা জরুরি বৈকি। আর এ ক্ষেত্রে রাহিমা সুলতানা রীতার পরামর্শ, মাথায় ম্যাসাজ করতে প্রয়োজন হয় শুধু দুই হাত ও অরগানিক তেল। তেল নিয়ে হাতের দশ আঙুলের ডগার সাহায্যে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করতে হবে চক্রাকার গতিতে। নারিকেল তেল এ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হবে সবার জন্য। তেলের সঙ্গে আমলা, মেথি, ত্রিফলা এমনকি লেবুও ব্যবহার করা যায়। একেক উপাদানের একেক গুণাগুণ। তেল আসলে চুলের খাবার। তেলের সঙ্গে আমলা কিংবা লেবুর মিশ্রণের সুগন্ধি মন খুশি করতে যেমন সাহায্য করে তেমনই চুলে পুষ্টির জোগানও দেয়। সপ্তাহে দুদিন, আর একেবারেই না পারলে অন্তত একদিন নিজের জন্য সময় বের করে সঠিকভাবে ম্যাসাজ করা উচিত। এটা আসলে কোনো বিলাসিতা নয়, বরং নিজেকে আবারও কাজের জন্য তৈরি করে তোলা। কারণ মন ভালো থাকলে, শরীরটাও ভালো থাকে। কাজের স্পৃহা বাড়ে। আর এর মধ্যে দিয়ে আবার কেশচর্চাটাও হয়ে যায়।
পারলারে গিয়ে হোক কিংবা বাড়িতে- সপ্তাহে অন্তত একদিন এই সেবাটা নেওয়া উচিত সবার। প্রতিবার শ্যাম্পু করার আগে অবশ্যই চুলে তেল দিতে হবে। না হলে চুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। চুলের গোড়ার আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে তেল। তবে তেল কুসুম গরম অবস্থায় মাথায় ম্যাসাজ করলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। সারা দিন পর বাড়ি ফিরেও 'হট ওয়েল ম্যাসেজ' নেওয়া যেতে পারে। যেহেতু এর সঙ্গে মন ভালো হওয়ার একটা যোগ রয়েছে তাই, পরিবেশটাও তৈরি করতে হবে নিজেকেই ।
পারলারে গিয়ে সেবা নিলে পরিবেশ যেমন থাকে নিজের ঘরকেও তেমন বানানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে পরিমাণমতো তেল গরম করে, এর সঙ্গে পছন্দের উপাদান মিশিয়ে বসে যেতে হবে আয়নার সামনে। মোবাইলে বা ল্যাপটপে এ সময় বাজিয়ে দিন মন ভালো করা গান বা সংগীত। তারপর তেল চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করতে হবে চক্রাকার গতিতে। নিজেই করতে পারেন গান বা সংগীত শুনতে শুনতে। আবার বাড়িতে কেউ থাকলে তাকে দিয়েও করাতে পারেন। রাতের বেলা ম্যাসাজ করালে সারা রাত রেখে পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে চুল ফেলতে হবে। মোদ্দা কথা হলো, কাল তো ছুটির দিন। এমন একটা ম্যাসাজ নেওয়ার পরিকল্পনা রেখে দিন কালকের তালিকায়। এতে তো মাথা হালকা হবেই সঙ্গে ফুরফুরে হবে মনটাও।