বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডার ছিল। কতকগুলো ক্যাডারের আবার রয়েছে সাব–ক্যাডার। সাব–ক্যাডারগুলোরও ক্ষেত্রবিশেষে রয়েছে বিষয়ভিত্তিক বিভাজন। যেমন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি নামে দুটো সাব–ক্যাডার রয়েছে। তেমনি সাধারণ শিক্ষার মধ্যে বিভাজন আছে বিষয়ওয়ারি। প্রতিটি বিষয়ে নিয়োগ হয় সে বিষয়ে প্রার্থীর মেধা বিবেচনায়।
পদোন্নতিতেও নিজস্ব বিষয়ভিত্তিক বিভাজনও থাকছে। এর ব্যত্যয় করার প্রয়োজন বা সুযোগ আছে কি না, সে অনুসন্ধান জটিল। যাচাই–বাছাই করেই এসব ক্যাডার নিয়ম প্রণীত হয়েছে। বিসিএসের ভেতর আছে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব। আর সে দ্বন্দ্ব মূলত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। সব ক্যাডারের মধ্যে বেতন, সুবিধাদি ও পদোন্নতির সুযোগে যেন বৈষম্য না থাকে, এ ধরনের একটি যৌক্তিক দাবি রয়েছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন ক্যাডার পদের সামাজিক মূল্যায়ন সরকার করতে পারে না। এ কথা অনেকে বুঝেও বুঝতে চান না। বিসিএস পরীক্ষার সূচনাতেই দুটো অংশ হয়। একটি ছাত্রজীবনের পঠিত বিষয় ও এর ফলাফলকেন্দ্রিক। যেমন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ।
আরেকটি অংশ থাকে সাধারণ প্রশাসনের অবশিষ্ট যেমন প্রশাসন, পররাষ্ট্র, পুলিশ, কর, শুল্ক, হিসাব, নিরীক্ষা ইত্যাদি ক্যাডার। সাধারণ প্রশাসনের ক্যাডারগুলোয় নিয়োগ দেওয়া হয় সম্মিলিত মেধাতালিকা ও পছন্দের ক্রম অনুসারে। এক রকম নয় তাদের কার্যপরিধি। কিন্তু সবাই এক রকম সমান সুযোগ চাইছেন। এটা যেখানে যতটুকু সম্ভব, তা দেওয়া উচিত।
তবে স্মরণ করতে হবে, সব ক্যাডারে নিযুক্তি হচ্ছে মেধা ও পছন্দের ক্রম অনুসারে। সুতরাং যাদের সুযোগ বেশি বলে অনুযোগ, সেখানে মেধাক্রমে উপযুক্ত স্থানে থাকলে অন্যরাও অন্তর্ভুক্ত হতে পারতেন। এ সাধারণ প্রশাসনের ক্যাডারগুলোরও বিশেষায়িত কিছু দিকও থাকে। নিয়োগ–পরবর্তী সময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের সেভাবে তৈরি করা হয়।
এসব ক্যাডার জনপ্রশাসনে প্রয়োজনীয় বলে বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চালু হয়েছে। কয়েকটি চালু রয়েছে যুগবাহিত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায়। এখন অন্যদিকে সুযোগ-সুবিধা বা সামাজিক মর্যাদা বেশি বলে কেউ কেউ সেদিকে যেতে চাইছেন। কয়েকটি ক্যাডার দাবি তুলছে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। এভাবে কিছু ক্যাডার যুক্তও হয়েছে। তবে জানা যায়, বিলুপ্ত ক্যাডারগুলোর কাজ আগের মানে থাকছে না। ভবিষ্যতে এ শূন্যতা আরও প্রকট হতে পারে।
অপ্রয়োজনে ক্যাডার সৃষ্টি করা হয়নি। আর কোনো কোনো ক্যাডারকে বিলুপ্ত করে যাঁরা প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হতে চাইছেন, তাঁদের জন্য নির্ধারিত কাজ কারা করবেন, মান কীরূপ থাকবে, সেটা নিয়ে কোনো আলোচনা লক্ষণীয় হয় না। উল্লেখ করতে হয়, সচিবালয় ও ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স ক্যাডার দুটোকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে আগেই একীভূত করা হয়েছে।