সাবরিয়া করনের স্বামী তুরস্কের সরকারি রেল কোম্পানিতে ৩২ বছর চাকরি করেছেন। তাঁদের কন্যা নেহির এই ট্রেনে চড়েই বড় হয়েছেন। সাবরিয়ার স্বামী আলী করন ২০২০ সালে করোনায় মারা গেছেন। গত মাসে তুরস্কে রিখটার স্কেল ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘান হানলে অসংখ্য ভবন বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় সাবরিয়ার বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ১৩ বছর বয়সী কন্যাকে নিয়ে নিরুপায় হয়ে যান তিনি। অবশেষে ঘুমানোর জন্য সেই চিরচেনা ট্রেনের বগিতে গিয়ে ওঠেন তিনি। এখন সেটাই তাঁদের ঘর, সেটাই তাঁদের বাড়ি।
একটি আইনি সংস্থার কর্মী সাবরিয়া তাঁর কন্যাকে নিয়ে গত ১৮ দিন ধরে একটি দুই শয্যার স্লিপার কেবিনে দিন–রাত কাটাচ্ছেন। সাবরিয়া বলেন, ‘এখানে থাকতে হবে এটা আমরা কখনোই ভাবিনি। সাধারণত ট্রেনে ভ্রমণ করা আনন্দের। কিন্তু এখন তা অন্য রকম।’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় এই ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আর ১৫ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কেউ তাঁবু, কেউ কনটেইনার, কেউ হোটেল–রিসোর্ট এমনকি অনেকেই ট্রেনের বগিতে আশ্রয় নিয়েছে। তুরস্কের হাতাই প্রদেশের বন্দর নগরী ইস্কেনদেরুনের অধিকাংশ গৃহহীন মানুষ ট্রেনে আশ্রয় নিয়েছে।
ভূমিকম্পে সাবরিয়াদের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়নি। তাঁদের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে সামান্য আঘাত লেগেছে, দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ কারণে তাঁরা বাড়ি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। আর কর্তৃপক্ষও এখনই ভবনগুলোতে প্রবেশ না করতে মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছে।
ইস্কেনদেরুন স্টেশনটি খোলা আছে। স্টেশনে ও ট্রেনে আশ্রয় নেওয়ার জন্য এখন শত শত মানুষের ভিড়। সাবরিয়া ও নেহিরের মতো যাঁরা শুরুতে এসেছেন, তাঁরা ট্রেনের স্লিপার কেবিনে আশ্রয় নিতে পেরেছেন। আর অন্যদের সিটে সোজা হয়ে ঘুমাতে হচ্ছে।
সাবরিয়াদের মতো ২০ বছর বয়সী ইউসুফ কুর্মা ও আজিল ওজসেলিকও ট্রেনে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউসুফ ও আজিলের বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়েছিল। কিন্তু ভূমিকম্প তাঁদের এ পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। ভূমিকম্পের প্রথম ধাক্কার সময় একে অপরকে খুঁজে পাওয়ার সময় থেকেই তাঁরা এক সঙ্গে আছেন। আজিল বলেন, ‘এত মৃত্যুর মধ্যে তো আমরা বিয়ে করতে পারি না।’