ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া ছাড়াও মশাবাহিত রোগ জাপানিজ এনকেফালাইটিস বাংলাদেশে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। দেশে যে প্রজাতির মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, সেই কিউলেক্স মশা এই রোগের বাহক। রোগটিতে মৃত্যু হতে পারে প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের। ১৫ বছর বা এর চেয়ে কম বয়সের শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সাময়িকভাবে কিছু চিকিৎসা রোগের লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি দেয়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণা বলছে, জাপানিজ এনকেফালাইটিসের কারণে বাংলাদেশ গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব পরিবারের সদস্যরা এই রোগে আক্রান্ত হয় তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রোগের তাত্ক্ষণিক চিকিৎসার জন্য রোগীপ্রতি গড়ে ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা খরচ করতে হয় এবং দীর্ঘকালীন চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে চার হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। এ ছাড়া যেসব রোগীর শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা তৈরি হয় এবং কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, সেসব রোগীর পরিবারগুলোকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষক রেবেকা সুলতানা জাপানিজ এনকেফালাইটিসের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। গতকাল তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে প্রতি মাসেই জাপানিজ এনকেফালাইটিসে আক্রান্ত দু-একজন করে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। কোনো মাসে ৮ থেকে ১০ জন করেও পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘ভ্যাকসিনই হচ্ছে এই রোগ নির্মূলের একমাত্র উপায়। আশা করা হচ্ছে, আগামী দু-এক বছরের মধ্যে গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস) থেকে এ রোগের ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। কিন্তু তার আগে প্রস্তুতিমূলক কিছু কাজও দরকার।’
দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩৬ জেলায়ই কোনো না কোনো সময় জাপানিজ এনকেফালাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। যদিও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। রাজশাহী ও রংপুরে এ রোগী বেশি। সরকারি হিসাবে গত বছর এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮। তার আগের বছর পাওয়া যায় ১০০-এর কাছাকাছি।
সার্বিক চিত্র
চট্টগ্রামে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাপানিজ এনকেফালাইটিস বিষয়ে এক কর্মশালায় বলা হয়, ১৮৭১ সালে জাপানে সর্বপ্রথম জাপানিজ এনকেফালাইটিসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং এশিয়ার দেশগুলোতে এটা বিস্তার লাভ করে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের জ্বর, মাথা ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন (ভুল বকা), অচেতন হয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণত মশা কামড় দেওয়ার চার থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি করে।