শত্রুর মুখে বন্ধুর মতো কথা কূটনীতিতে চলে, রাজনীতিতেও চলতে পারে। সবই কৌশলী খেলা। সবই আপন পক্ষের জয় নিশ্চিত করার আয়োজন। এটি বোঝা যায় যখন সরকারের অন্তত দু'জন মন্ত্রী অনেকটা আগ বাড়িয়েই খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে ফেরানোর কথা তুলেছেন। আবার সরকারেরই অন্য দুই মন্ত্রীর কথার সুর একেবারে উল্টা। একপক্ষ রাজনীতির সুযোগের কথা তুলছেন, আবার অন্যপক্ষ তা বাতিলও করে দিচ্ছেন।
যেমন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন- খালেদা জিয়া অসুস্থ না হলে কারাগারে থাকতেন, তাঁর রাজনীতি করার সুযোগ নেই। তাঁর কথার প্রতিধ্বনি করেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না, এ কথা তাঁর মুক্তির শর্তে বা কোথাও বলা নেই। কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকও একই মত ব্যক্ত করেছেন।তার মানে খালেদা জিয়া প্রশ্নে বাদীও আওয়ামী লীগ, বিবাদীও তারা। বিষয়টি ভারি মজার। নিজেরাই পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়ার অর্থ কী? আইনমন্ত্রীর বলা 'রাজনৈতিক মুক্তি'র হাতছানি দেখে কেউ আশাবাদী হলেও, যাতে আবার ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথা শুনে দ্বিধায় পড়ে যায়; এটাই কি চাওয়া হচ্ছে? যাতে ভয় পেয়ে আপসের কথা চিন্তা করে?
আওয়ামী লীগ কি চাইছে মানুষ এসব নিয়ে কথা চালাচালি করুক, অভাব-অনটন, বিদ্যুতের ভোগান্তি ইত্যাদির কথা ভুলে যাক? আওয়ামী লীগ হয়তো চাইছে রাজনীতির ময়দানে এ নিয়ে যে আলোচনা জমে উঠছে তা আওয়ামী লীগের দেখানো পথেই চলুক। এজন্যই একইসঙ্গে সাপ ও ওঝার ভূমিকা নেওয়া?খালেদা জিয়াকে এখন রাজনীতির মাঠে কেন দরকার সরকারের? তাঁর রাজনীতি করা এক বিষয়, আর তাঁকে দিয়ে রাজনীতি করিয়ে নেওয়া একেবারেই আলাদা বিষয়। বিএনপির মূল দুটি দাবি হলো- নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়াকে মামলা ও সাজা থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি। সরকারের কৌশল হলো- মামলা চলবে, দরকারে আরও মামলা আসবে এবং কারাদণ্ডের খাঁড়ার তলে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন! সেটি কেমন রাজনীতি হবে? সেটি হবে নিয়ন্ত্রিত রাজনীতি। তিনি মুক্ত থাকলে যা করতেন না সেটি করিয়ে নেওয়ার রাজনীতি।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং রুমিন ফারহানাসহ বিএনপি নেতাদের কথায় মনে হচ্ছে, তাঁরা সরকারের চালটা ধরতে পেরেছেন।