ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর কয়েক সপ্তাহ পরের ঘটনা। পশ্চিম ইউক্রেনের ইভানকো-ফ্রাঙ্কিভস্ক অঞ্চলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রুশ বাহিনী। ‘কিনঝাল’ নামের এই অস্ত্রের ব্যবহার সে সময় সাড়া ফেলেছিল। কারণ, ক্ষেপণাস্ত্রটি একেবারেই আধুনিক, ছুটতে পারে শব্দের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, অস্ত্রটি এর আগে কখনো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের কথা শোনা যায়নি। সমরবিদদের ধারণা, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো হাতে গোনা কয়েকটি দেশের কাছে এই অস্ত্র–প্রযুক্তি রয়েছে। তবে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া।
বিশ্বের সমরশক্তির দিক দিয়ে রাশিয়ার অবস্থান চূড়ার দিকে। তাই দেশটির হাতে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র থাকবে, বিষয়টি স্বাভাবিক। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে রুশ বাহিনী নানা ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। এ অস্ত্রগুলো নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিমান প্রদর্শনীতে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানিকারক সরকারি প্রতিষ্ঠান রোসোবোরোনেক্সপোর্টের প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্দার মিখেয়েভ। সে অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যবহার করা আধুনিক অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে কেএ–৫২ই ও এমআই–১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার, সুখোই–৫৭ই ও সুখোই–৩৫ যুদ্ধবিমান, ইস্কান্দার–ই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা এবং টি–৯০ ট্যাংক।
ইউক্রেন হামলার সময় রুশ নেতারা ভেবেছিলেন কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা দেশটিতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন। তবে তেমনটি হয়নি। কারণ কী? বলা যেতে পারে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মনোবলের কথা। ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ বাহিনীকে একের পর এক বাধার মুখে ফেলেছে তারা। তবে তাঁদের মনোবল ও রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এগিয়ে থাকার পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে পশ্চিমা অত্যাধুনিক অস্ত্র। রুশ বাহিনীর হামলার শুরু থেকেই শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র দিয়ে কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা। গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শুধু যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেনকে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পশ্চিমা এসব অস্ত্র ছাড়া রাশিয়ার সামনে ইউক্রেন টিকতে পারত না বলে অভিমত সমরবিদদের। এমনই একজন ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টাডি অব ওয়ারের বিশেষজ্ঞ জর্জ ব্যারোস। তিনি বলছিলেন, ‘ইউক্রেনকে দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দিয়েছে। এই অস্ত্রগুলো যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিয়েভ যদি এই পশ্চিমা সহায়তা না পেত তাহলে রাশিয়া হয়তো এত দিনে যুদ্ধে জয় পেয়ে যেত।’