বেসরকারি হাসপাতালে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার মূল্য বাড়িয়ে ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৯৫টি পরীক্ষার ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবটি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
চিকিৎসকেরা বলছেন, সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিলে স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। তবে বিএসএমএমইউর উপাচার্য বলেছেন, সারা দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন মূল্য তালিকা বাস্তবায়ন করা কঠিন।
২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবামূল্য নির্ধারণে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রোগীরা যেন প্রতারিত না হন, সে জন্য এই ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। ওই সংবাদ সম্মেলনের প্রায় চার বছর পর সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, অধিদপ্তর ১৩৯টি রোগ নির্ণয় পরীক্ষার তালিকা পাঠালেও ফি প্রস্তাব করেছে ৯৫টির। ৪৪টি পরীক্ষার ক্ষেত্রে মূল্য প্রস্তাব করা হয়নি। এ ছাড়া ৮টি বিশেষায়িত পরীক্ষা এবং ২১টি অস্ত্রোপচারের মূল্যও প্রস্তাব করা হয়নি। অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব পরীক্ষা ও সেবামূল্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও বারডেম হাসপাতালের বর্তমান ফি উল্লেখ করে এগুলোর আলোকে ফি প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রস্তাবিত ফি উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সেবামূল্যের প্রায় দ্বিগুণ।
এই প্রস্তাব নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সভা হয়। এতে অধিদপ্তরের কয়েকজন পরিচালক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে স্বাচিপ সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সব হাসপাতালের সেবামূল্য এক হতে পারে না। এ জন্য হাসপাতালগুলোর গ্রেডিং করে মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটা করতে পারলে জনগণের উপকার হবে। তিনি বলেন, সরকার একটি মূল্যতালিকা বেঁধে দিলে সবাই মানতে বাধ্য হবে। এতে স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা থাকবে। এটি বাস্তবায়নে একটি কমিটি করা হবে। এই কমিটি সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে, যা পরে বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র জানায়, অধিদপ্তর বিএসএমএমইউতে সিরাম আয়রন পরীক্ষার ফি বর্তমানে ২৫০ টাকা হলেও তা ১ হাজার ১১৮ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। অথচ বেসরকারি তিনটি বড় রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে এই ফি ৭৫০ টাকা। প্রস্তাবে সিটিস্ক্যানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশনের ফির ওপর ভিত্তি করে। সেখানে সিটিস্ক্যানের (ওষুধ ছাড়া) বর্তমান ফি ১০ হাজার টাকা। প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। একই প্রতিষ্ঠানে ব্রেইন সিটিস্ক্যান ফি ৪ হাজার টাকা, প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ টাকা। তবে বড় তিনটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে দিতে হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা।