মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলে কয়েক দিন আগে ঢাকা সফর করে গেলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের কাছে আমেরিকা গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার একটি রোডম্যাপ প্রত্যাশা করেছিল। সেটি তারা দেখতে পায়নি বলেই বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এটি আমাদের কারোরই জানার কথা ছিল না। যেহেতু তিনি জনসমক্ষে এটি বলেছেন, তাই আমরা সবাই এখন জানতে পারছি।
এখন প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, গণতন্ত্র বলতে আমরা কী বুঝব? আমাদের দেশের একটি দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রয়েছে। সেই আলোকে বিবেচনা করলে আমেরিকার গণতন্ত্র সম্মেলনে আমাদের আমন্ত্রণ পাওয়া উচিত ছিল। আমাদের দেশ যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে, আমরা সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি; সেটির পেছনে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি দুটি প্রধান বিষয়ও ছিল। সে দুটির একটি হলো, পাকিস্তান আমাদের গণতান্ত্রিক পথকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে আমাদের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লড়াই করতে হয়েছিল। আরেকটি হলো, বৈষম্য কমিয়ে আনা। পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের ভূখণ্ডে যে বৈষম্য জারি রেখেছিল, সেসব থেকে মুক্তি পেতে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলাম। একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে গণতন্ত্রের বিষয়টি জড়িত ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৫০ বছরে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমরা নানা লড়াই-সংগ্রাম দেখেছি। যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য, সেই বাংলাদেশ গণতন্ত্রের একটি আদর্শ ভূমি হবে- এটা ছিল প্রত্যাশিত। গণতান্ত্রিক দেশের সামনের সারিতে থাকার কথা ছিল আমাদের। কিন্তু আমরা তা পারলাম না। যেখানে আমেরিকার গণতন্ত্র সম্মেলনে ১১০টি দেশ যাবে, সেখানে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পেল না- এটা আমাদের প্রত্যাশার বাইরে। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পাবে- এটা আশা করেছিলাম। তা না হওয়ায় খানিকটা হতাশ হয়েছি।
আরেকটি বিষয় এখানে খেয়াল রাখতে হবে, গণতন্ত্র কেবল আমেরিকা আমন্ত্রণ জানাল কিনা, এর ওপর নির্ভর করে না। এটি একটি বৈশ্বিক আমন্ত্রণ। এর চেয়েও লক্ষণীয়, আমরা আমাদের সক্ষমতা কতটা বাড়াতে পেরেছি; গণতন্ত্রের জন্য যে সবার অংশগ্রহণ অপরিহার্য, তা কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছি- এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা এখন যে বড় ধরনের উন্নয়নের কথা বলছি, তার প্রধান চালিকাশক্তি সব মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সেটি করছে বলেই আমাদের অর্থনীতিতে অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বব্যাপীও আমাদের অর্থনীতি নিয়ে একটি সুনাম তৈরি হয়েছে। এখন প্রয়োজন অর্থনীতিকে সব মানুষের জন্য উপাদেয় করা। এ ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করা যেতে পারে তখনই, যখন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে গণতান্ত্রিক অবস্থা নিরাপদ থাকে। সেটি হতে পারে রাজনৈতিক পদ্ধতিটি যদি গণতান্ত্রিক হয়।