বৃষ্টি কী? কেন আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রাচীন আমলের মানুষ বিভিন্ন অদ্ভুত ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন। সুমেরিয়ানদের কথাই ধরুন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, বৃষ্টি হচ্ছে আকাশের দেবতা ‘অ্যান’ (An)-এর বীর্য। আকাশ থেকে এগুলো মাটিতে পড়ে ভূমির দেবী ও অ্যান-এর স্ত্রী ‘কী’ (Ki)-কে গর্ভবতী করার জন্য। আর কী-এর গর্ভেই জন্ম নেয় পৃথিবীর তাবত গাছপালা। আখেডিয়ানদের (Akkadians) বিশ্বাস ছিল খানিকটা ভিন্ন। তারা মনে করতেন, আকাশের মেঘ হচ্ছে স্বর্গের দেবতা ‘অ্যানু’ (Anu)-র স্ত্রী ‘অ্যান্তুর’ (Antu)-র স্তন। আর বৃষ্টি হচ্ছে সেই স্তন থেকে নির্গত দুগ্ধের ধারা।
আজকালকার মানুষ, স্বাভাবিকভাবেই, এমন প্রাচীন ধারণায় আর বিশ্বাস করেন না। বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা আজ জানি বৃষ্টি কী, বৃষ্টি কেন হয়, এর সুফলইবা কী। বৃষ্টিপাতের জন্য প্রথমেই দরকার পড়ে জলীয় বাষ্পের। এই জলীয় বাষ্পের সৃষ্টি হয় পৃথিবীর বিভিন্ন জলাশয়, বিশেষ করে সমুদ্র থেকে। সূর্যের তাপে ও অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে পানি বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যায়। উপরে গিয়ে এই জলীয় বাষ্প বাতাসের ধূলিকণা, বালুকণা ইত্যাদির সহায়তায় জমাটবদ্ধ হয়ে তৈরি করে মেঘ। আর, মেঘের আকৃতি বড় হতে হতে যখন ভারি হয়ে যায়, তখন তা থেকে নেমে আসে বৃষ্টির ধারা।
এই বৃষ্টির পানি কৃষিকাজের জন্য অপরিহার্য। প্রাচীনকালেও তাই মানুষের কাছে বৃষ্টির কদর ছিল, এখনও আছে। প্রয়োজনের সময় বৃষ্টি না-হলে বা বৃষ্টি হতে বেশি দেরী হলে, মানুষ বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতো; প্রাচীনকালেও করতো, এখনও করে। কথিত আছে, খ্রিস্টের জন্মের আগের প্রথম শতাব্দিতে, অনি হা-মাজেল (Honi ha-M'agel) নামের একজন ইহুদি আধ্যাত্মিক গুরু, প্রার্থনার মাধ্যমে, জুদেইয়া (Judaea ) এলাকায় তিন বছর স্থায়ী খরা দূর করেছিলেন। তিনি বালুতে একটি বৃত্ত এঁকে তাতে বসে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা শুরু করেন এবং প্রতিজ্ঞা করেন, যতক্ষণ বৃষ্টি না-হবে, ততক্ষণ সেই বৃত্ত ত্যাগ করবেন না। তাঁর দীর্ঘসময়ের প্রার্থনায় শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি নেমে আসে জুদেইয়ায়।
মার্কুস আউরেলিউস (Marcus Aurelius) ১৬১ থেকে ১৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোমের সম্রাট ছিলেন। রোমের পাঁচ জন ‘ভালো সম্রাট’-এর শেষজন হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। তিনি দার্শনিকও ছিলেন। নিয়মিত লিখতেন। তাঁর সেসব লেখার একটি সংকলনের নাম ‘বোধি’ (Meditations)। এতে তিনি লিখেছেন, এথেন্সবাসীরা খরার সময় বৃষ্টির জন্য আকাশের দেবতা জিউস (Zeus)-এর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করতো।