দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন নির্বাচিত হওয়ায় দুদক আইনের সূত্র ধরে রাষ্ট্রপতি পদটি লাভজনক কিনা, তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই সমালোচনা কতটা যুক্তিসংগত, তা দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের আলোকে বুঝে নেওয়া বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খুবই জরুরি।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬(৩)-এ বলা হয়েছে, 'এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে কোন ব্যক্তি কেবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী হইবার কারণে প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলিয়া গণ্য হইবেন না।' কেউ কেউ বলছেন, এটি শুধু সংসদ নির্বাচনের জন্যই সীমাবদ্ধ। তবে সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদ পড়লেই পরিস্কার বোঝা যায়, শুধু সংসদ নির্বাচনের জন্যই রাষ্ট্রপতির পদ অলাভজনক, বাকি ক্ষেত্রে পদটি লাভজনক- ব্যাপারটি তেমন নয়।
২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদকে অলাভজনক গণ্য করার বিষয়টি সংযুক্ত করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ ১৪৭(৪)-এ বলা হয়েছে 'এই অনুচ্ছেদ নিম্নলিখিত পদসমূহে প্রযোজ্য হইবে- (ক)- রাষ্ট্রপতি ...।' অনুচ্ছেদ ১৪৭(৪)-এ রাষ্ট্রপতিসহ কোন কোন পদ লাভজনক পদ হিসেবে গণ্য হবে না, তার একটি তালিকা দেওয়া আছে। অনুচ্ছেদ ১৪৭(৩)-এ বলা হয়েছে, এই অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হয়, এইরূপ কোনো পদে নিযুক্ত বা কর্মরত ব্যক্তি কোনো লাভজনক পদ কিংবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হইবেন না কিংবা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোনো কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না।' স্পষ্টতই অনুচ্ছেদ ১৪৭(৩)-এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কোনো লাভজনক পদে বহাল হতে পারবেন না। যার মানে হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির পদটিই আদতে কোনো লাভজনক পদ নয়।
রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নন। কারণ এগুলো সাংবিধানিক পদ। সাংবিধানিক পদ লাভজনক পদের সংজ্ঞায় পড়ে না। সাধারণ অর্থে প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ বলতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কিংবা প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত এমন সব পদধারীকে বোঝায় যাঁরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন গ্রহণ করে থাকেন। তাই সব গণকর্মচারী বা পাবলিক সারভেন্ট প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে কর্মরত আছেন বলে স্বীকৃত। স্থানীয় সরকারের অনেক নির্বাচিত পদধারী যাঁরা প্রশাসনিক কাজে জড়িত আছেন, বেতন নেন; সরকারি অফিস, গাড়ি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেন, তাঁরা লাভজনক পদে আছেন। আবার সংসদ সদস্যরা যেহেতু বেতন নেন না, ভাতা নেন; তাই তাঁদের পদ লাভজনক নয়।
সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব, জনগণের প্রতি জবাবদিহি ও তাঁদের স্বার্থের মধ্যে যেন কোনো সংঘাত না হয়, এ উদ্দেশ্যে তাঁদের পথকে অলাভজনক গণ্য করা হয়। ১৯৬৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় রায় দেন- একজন ব্যক্তি লাভজনক পদে আছেন কিনা তা নির্ধারণে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যেমন :(ক) সরকার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কিনা, (খ) নিয়োগ বন্ধ করার ক্ষমতা সরকারের আছে কিনা, (গ) সরকার পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কিনা, (ঘ) পারিশ্রমিকের উৎস কী, এবং (ঙ) পদের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষমতা ইত্যাদি। এই বিবেচনাতেও রাষ্ট্রপতির পদটি লাভজনক হিসেবে গণ্য হয় না।