পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পেশিশক্তি ও ক্ষমতাচর্চার বিষয়টি নতুন নয়। বরং এই পরিস্থিতি দিন দিন আরও গাঢ় হচ্ছে। আর এই পেশিশক্তি ও ক্ষমতাচর্চার প্রতীক হয়ে উঠেছে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালনা। অনেক মোটরসাইকেলই আসলে নিবন্ধন নম্বরবিহীন। তার মানে যথাযথ আইন মেনে বা অনুমোদন নিয়ে মোটরসাইকেল চালনাকে তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। কারণ, বেশির ভাগ মোটরসাইকেলই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ব্যবহার করছেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাঁরা আতঙ্কও সৃষ্টি করে থাকেন। বেপরোয়া মোটরসাইকেল ছাড়াও আছে অননুমোদিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এতে ক্যাম্পাসে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, আহত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নয়টি হল ঘুরে দেখা যায়, সেসব হলে তিন শতাধিক মোটরসাইকেল আছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ১০০টির নিবন্ধন নম্বর দেখা যায়নি। এসব মোটরসাইকেলের মালিক মূলত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকার ও লোগো লাগিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে সেগুলো চালানো হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মোটরসাইকেল থাকা উচিত নয়। তাহলে হলগুলোতে তিন শতাধিক মোটরসাইকেল কেন, যার মধ্যে আবার এক-তৃতীয়াংশই নিবন্ধন নম্বরহীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো লাগিয়ে এভাবে মোটরসাইকেল চালানো কতটা ন্যায়সংগত? একইভাবে দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধন নম্বরবিহীন ও অননুমোদিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যাও বেড়েছে ক্যাম্পাসটিতে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি এসব দেখে না, নাকি দেখেও না দেখার ভান করে।
এমন পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাসটিতে দুর্ঘটনা বাড়ছে। অনেকে গুরুতর আহত হয়ে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভুক্তভোগী হয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আহত এক শিক্ষার্থীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এমন বিশৃঙ্খলার কারণে ক্যাম্পাসের বাইরের মানুষও সেখানে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। তাদের বাধা দিতে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা মারধরের শিকারও হয়েছেন। ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা শঙ্কিত। এর দায় কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে?