মাঝখানে হাঁসের কালো ডিম নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছিল দেশে। আজকের গল্পটাও কালো ডিমের, তবে এই ডিমের খোঁজে আমাদের যেতে হবে জাপানে। এই ডিমের সুখ্যাতি অবশ্য জাপান ছাড়িয়ে গোটা পৃথিবীতেই। বিশেষ করে বৈচিত্র্যপিয়াসী পর্যটকেরা এই ডিমের স্বাদ নিতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে দ্বিধা করেন না।
টোকিওর পশ্চিমে হ্যাকোন এলাকায় অবস্থিত অওয়াকুদানি একটি সক্রিয় আগ্নেয় উপত্যকা। স্থানীয়ভাবে পরিচিত জিগোকুদানি বা নরক উপত্যকা নামে। তবে জায়গাটি বেশি নাম কামিয়েছে এখানকার কালো ডিমের জন্য। সেখানকার মানুষের আবার ধারণা, এই ডিম খেলে কয়েক বছর আয়ু পর্যন্ত বেড়ে যায়!
এই আগ্নেয় উপত্যকার জন্ম প্রায় ৩ হাজার বছর আগে, মাউন্ট হ্যাকোনের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে। এ সময় বেশ কিছু উষ্ণ প্রস্রবণ ও সালফার নির্গমন হয় এমন গর্তের জন্ম হয়। সবকিছু মিলিয়ে অওয়াকুদানির রুক্ষ, পাথুরে এলাকা সালফারের কারণে সৃষ্ট একটি ধোঁয়ায় ঢেকে থাকে সব সময়। তা ছাড়া সালফারের কারণে এমনিতেও গোটা এলাকায় কেমন ডিম ডিম একটা গন্ধ ছড়িয়ে থাকে।
এবার এখানকার ডিমের গল্প শুরু করা যাক। কুনো-তামাগো বা ‘কালো ডিম’ আসলে আলাদা কোনো ডিম নয়। এগুলো সাধারণ মুরগির ডিমই, যা অওয়াকুদানির প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণে ফোটানো হয়। পানিতে থাকা সালফার ও আয়রন বা লোহা ডিমের খোলকে কয়লার মতো কালো রূপ দেয়। ভেতরের অংশ কিন্তু থাকে ওই সাদা-হলুদই। স্থানীয় কিংবদন্তি হলো—কালো ডিম খেলে মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভ করে, সেটা পাঁচ থেকে সাত বছর। পাঁচট কালো ডিমের একটি প্যাকেট কেনা যায় ৫০০ জাপানি ইয়েনে (৪০০ টাকা)।
কালো ডিম ফোটানো সরাসরি দেখতে অওয়াকুদানি রোপওয়ে স্টেশন থেকে পর্বতের মধ্য দিয়ে যাওয়া পথ ধরে মিনিট পনেরো হাঁটলেই চলবে। মোটামুটি ১০০০ মিটার উচ্চতায় উষ্ণ প্রস্রবণে চলে এই কালো ডিম সেদ্ধের কাজ। কুনো-তামাগো কিংবা কালো ডিম ফুটানো দেখা কিন্তু ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে আপনার। কারণ উষ্ণ প্রস্রবণের ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ১ ঘণ্টা ফুটানো হয় এই ডিম। তারপর আরও বাড়তি ১৫ মিনিট উত্তপ্ত করা হয়। অবশ্য এই ডিমের স্বাদ সাধারণ সিদ্ধ ডিমের মতোই। উষ্ণ প্রস্রবণ এলাকা থেকে যেমন এই ডিম কিনতে পারবেন, তেমনি পাওয়া যায় রোপওয়ে স্টেশনেও।