অমর্ত্য সেন লিখেছিলেন, 'মাঝে মাঝেই আমরা প্রলুব্ধ হয়ে ভুল পথে এগিয়ে গেছি, কিন্তু তার মধ্যে ঠিক পথে যেটুকু এগিয়ে যাই, তা যেন হারিয়ে না ফেলি। এখনও বহুপথ বাকি'। (জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি)।
এক.
যত্রতত্র চায়ের কাপে বাতাস তুলছে সম্প্রতি সংগৃহীত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশের পাওয়া শর্তযুক্ত ঋণ সুবিধা। মোট পরিমাণ ৪৫০ কোটি ডলার। 'তুমভি খুশ, হামভি খুশ'- তুমি আর আমি নাচি আনন্দে। আইএমএফ খুশি, আমরাও খুশি। একটা সময় ছিল যখন আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংকের শর্তযুক্ত ঋণ সুবিধা চায়ের কাপে রীতিমতো ঝড় তুলত। মিছিল-মিটিং তো ছিলই। এখন তেমনটি নেই; আছে একটু-আধটু আলোচনা-সমালোচনা।
একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। বাঘের দেশ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। গত প্রায় দেড় দশকে (বিশেষত ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে) বাংলাদেশে অনেকটা 'নজিরবিহীন বিপ্লব' ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ এর কিছু নির্দেশক উপস্থাপন করা যায়- মাথাপিছু জাতীয় আয় উন্নীত হয়েছে ৮৪৩ থেকে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে; জাতীয় উৎপাদনের বৃদ্ধি প্রায় চার গুণ; কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং সাক্ষরতার হার ঊর্ধ্বমুখী; প্রত্যাশিত আয়ুতে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ:নিম্নমুখী শিশুমৃত্যুহার ও খর্বাকৃতি ইত্যাদি। এটি তাই কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয় যে, উন্নীত আর্থসামাজিক নির্দেশক বাংলাদেশকে 'রোল মডেলের মর্যাদা' এনে দিয়েছে। মোট কথা, আর্থসামাজিক নির্দেশকের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোকে পেছনে ফেলে আগুয়ান বাংলাদেশ (আলম, ২০২২)। এই 'বিপ্লব'-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালক হিসেবে বিবেচনা করা হয় প্রবৃদ্ধির প্রশংসনীয় উল্লম্ম্ফনকে, যা নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ধারণ করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ শতাংশের মাইলফলকে পৌঁছে। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় এ-যাবৎকালের সীমা পেরিয়ে ৮ শতাংশ।