ব্রিটিশ উপনিবেশের আধিপত্যের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষকে যে সংগ্রাম করতে হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে যে স্বাধীনতা এলো সেটি যে প্রকৃত স্বাধীনতা নয়, তা বুঝতে মানুষের বিলম্ব ঘটেনি। প্রথম কারণ স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় যার পেছনে ব্রিটিশদের উসকানি এবং সামনে ছিল প্রতিষ্ঠিত হিন্দু মধ্যবিত্তের সঙ্গে উদীয়মান মুসলিম মধ্যবিত্তের স্বার্থগত দ্বন্দ্ব। স্বাধীন বঙ্গকে ভাগ করে ফেলল, দাঙ্গায় মানুষ প্রাণ দিল, উৎপাটিত হলো। কিন্তু স্বাধীনতা যে মুক্তি আনতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল, সেটি আর দেখা গেল না।
পূর্ববঙ্গের মানুষের জন্য স্বাধীনতা যে অর্থবহ হয়নি, তার প্রমাণ তো বঙ্গভঙ্গ এবং সেই সঙ্গে যে আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ও শোষণভিত্তিক সমাজব্যবস্থা আগে ছিল, তাতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। স্বাধীনতার অর্থ দাঁড়াল ক্ষমতা হস্তান্তর এবং তাতে লাভবান হলো পশ্চিম পাকিস্তানিরা, বিশেষভাবে তাদের বেসামরিক ও সামরিক আমলাতন্ত্র এবং ব্যবসায়িক মহল। দুর্বৃত্তকে তারা একটি ঔপনিবেশিকে পরিণত করতে চেয়েছিল। সেটি পারিষ্কারভাবে বোঝা গেল যখন উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা এলো। পূর্ববঙ্গের মানুষ টের পেল তাদের চিরকালের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার ব্যবস্থা চলছে। অন্যদিকে দ্বিজাতিতত্ত্ব যে ভ্রান্ত ছিল, সেটি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের নবগঠিত গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন।