সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও একটি মোক্ষম বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের টাকায় তাঁর (শেখ হাসিনা) প্রতিকৃতি ছাপানোর একটি আব্দারে সাফ না করে দেন। তিনি বলেন, ওখানে শুধুই জাতির পিতার প্রতিকৃতি থাকবে। তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি। একসময় আমি বাংলাদেশের টাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছাপানোর পাকাপোক্ত ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।
পঁচাত্তরের নির্মম, জঘন্য, ন্যক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু শাহাদাত বরণ করেন। খুনিরা ক্ষমতায় বসেই জাতির পিতার স্বপ্নলালিত আদর্শ মুছে ফেলার অপচেষ্টা শুরু করে। দেশের কাগজের নোট থেকে তাঁর প্রতিকৃতি সরিয়ে হাইকোর্ট, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সংসদের ছবি সেখানে বসানো হয়। শোক-দুঃখে মুহ্যমান মনটা আমার বিষাদের মাঝেও আশায় বুক বাঁধে। কোনো দিন সুযোগ পেলেই এ গুরুতর অন্যায় ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার প্রতিবিধান করার চেষ্টা চালাব। একুশ বছরের ইতিহাস বিকৃতি, অত্যাচার, নির্মমতার, বিজাতীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টার জাল ছিন্ন করে জনগণের গণতান্ত্রিক রায়ে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষশক্তি শেখ হাসিনার সরকার।
১৯৯৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারের তিনজন প্রবীণ মন্ত্রী শামস কিবরিয়া, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদের প্রস্তাবে আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সপ্তম গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয় সদাশয় সরকার। আর্থিক ও ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের হাত থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় অর্থনীতিকে মুক্ত করা, হুন্ডি তথা মানি লন্ডারিং বিষয়ে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা, নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার নিয়মকে কোম্পানি আইনের 'ইকুইটিতে দেওয়া মূলধন পরিমাণের অর্ধেকের বেশি ঋণ নয়' বিধান কার্যকর করা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে রাজনীতিমুক্ত করার কাজে বেশ কিছুটা নিরবচ্ছিন্ন সময় দিতে হয়। আটানব্বইয়ের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেড় কোটি মানুষকে ৯ মাসব্যাপী ভিজিডি/ভিজিডিএফ কার্ডের নিশ্ছিদ্র সততায় খাদ্যসহায়তা দেয় শেখ হাসিনা সরকার। জনকল্যাণে নিবেদিত এ কার্যক্রমেও বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা দিতে থাকে। মূল্যস্ম্ফীতির কারণে কম সচ্ছল মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর যে অলিখিত করের বোঝা চাপে, তার যাতনা লাঘবের জন্যও সময় ও শ্রম দিতে হয়েছিল। ২০০১ সালে বার্ষিক গড় মূল্যস্ম্ফীতি ১ দশমিক ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়।