পাকিস্তানের বহুল কথিত বীর সেনাবাহিনী ঢাকার ধূলিচুম্বন করে আত্মসমর্পণ করে, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে, কিন্তু মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি না পাওয়ায় এবং সদ্যস্বাধীন দেশে ফিরে না আসাতে পারায় স্বাধীনতার অসম্পূর্ণতা নিয়ে বিদেশি সব গণমাধ্যমই মন্তব্য করেছে। ৮ জানুয়ারি ১৯৭১ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং রয়টার সদ্য কারামুক্ত ও লন্ডনে উপস্থিত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে দু’টি ডেসপাচ প্রেরণ করে তাতে পৃথিবী জেনে যায় কাক্সিক্ষত মুক্তি অর্জিত হয়েছে এবং তিনি আসছেন।
ডেসপাচে উল্লেখ করা হয় : শেখ মুজিবুর রহমান আজ (৮ জানুয়ারি ১৯৭২) লন্ডনে পৌঁছেছেন এবং সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন ‘বাংলাদেশ এখন চ্যালেঞ্জের ঊর্ধ্বে এক বাস্তবতা’। সাহসী কণ্ঠে অসুস্থতার কোনো লক্ষণ না দেখিয়ে ৫১ বছর বয়সী বঙ্গপিতা (বাঙালিদের জনক) বললেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করার কোনো প্রতিশ্রুতি তিনি মিস্টার ভুট্টোকে দেননি।
অভিজাত ক্ল্যারিজেস হোটেলের বলরুমে চিত্রিত দেয়াল আয়না প্রেক্ষাপটে রেখে টেলিভিশন আলোর ঝলকের নিচে শেখ মুজিব যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন, বাইরে বহুসংখ্যক উল্লসিত বাঙালি জমায়েত হয়েছে। তাকে প্রথম দিকেই যে প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হয়েছে, তা হচ্ছে : উড়োজাহাজে ঢাকায় যাওয়ার বদলে আপনি লন্ডনে কেন এলেন?
শেখ জবাব দিলেন : আমি ছিলাম কয়েদি, এটা পাকিস্তান সরকারের ইচ্ছেতে হয়েছে, আমার ইচ্ছেতে নয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি যোগসূত্র রক্ষা করার জন্য মিস্টার ভুট্টো তাকে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার জনগণের কাছে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আমি কিছুই বলতে পারব না। শেখ মুজিবকে সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বলা হয়, ‘আমাদের প্রিয় নেতা, মুক্ত মানুষের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে স্বাধীন রাষ্ট্রপতি।’ কালো টিউনিক ধাঁচের স্যুট পরা শেখ বাংলাদেশ সৃষ্টির সংগ্রামে জীবন বিসর্জন দেওয়া লাখ লাখ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি রাওয়ালপিন্ডি থেকে উড়োজাহাজে এ পর্যন্ত এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এই বলে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে দেন এবং স্বর উঁচিয়ে বিজয়ের ধ্বনি দেন ‘জয় বাংলা’।