পাসপোর্ট অফিসে ঘুস-দুর্নীতির যেন শেষ নেই। দুর্নীতি রোধে মাঝে মাঝে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গেলেও কিছুদিন পরই দেখা যায় সবকিছু চলছে আগের মতোই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলে আরেকদিকে খুলে দেওয়া হয় দুর্নীতির নতুন পথ। বিশেষ করে পাসপোর্ট অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিসগুলো যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব অফিসে অলিখিতভাবে দালাল নিয়োগ দিয়ে প্রকাশ্যে চলে ঘুসের কারবার। অধিকাংশ পাসপোর্ট অফিসে কথিত ‘চ্যানেল মাস্টারে’র মাধ্যমে প্রতিদিন ঘুস তোলা হয়। সব মিলে এর পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা! জানা যায়, এক কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসেই দিনে ঘুস ওঠে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এ তথ্য উঠে এসেছে যুগান্তরের অনুসন্ধানে। প্রশ্ন হলো, পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না কেন? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে সদিচ্ছা থাকলে তো এমনটি হওয়ার কথা নয়।
পাসপোর্ট খাত দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাতগুলোর অন্যতম। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) খানা জরিপ ২০২১ অনুযায়ী, ওই বছর দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে (৭০.৫ শতাংশ) ছিল এ খাত। এখনো এ খাতে ঘুস বাণিজ্য ও হয়রানি চলছে অব্যাহতভাবে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ সংক্রান্ত নানা তথ্য। শুধু নতুন পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রেই নয়, সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করার পর সুযোগসন্ধানীরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়নের নামেও রমরমা ঘুস বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্যগত জটিলতার কারণে যারা ই-পাসপোর্ট করাতে পারছেন না, তারাই হচ্ছেন এর শিকার। ই-পাসপোর্ট এড়িয়ে মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে তারা নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন পুরোনো পাসপোর্ট। জানা গেছে, ক্ষেত্রবিশেষে এই ঘুসের পরিমাণ হয়ে থাকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। উদ্বেগের বিষয় হলো, যেসব অপরাধী ও রোহিঙ্গা জাল-জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই ভুয়া জন্মনিবন্ধন দিয়ে এমআরপি করিয়েছিল, তারাও এখন ঘুসের বিনিময়ে এমআরপি নবায়ন করিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া বিদেশে আত্মগোপনে থাকা প্রভাবশালী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরাও ঢাকা থেকে এমআরপি নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন বলে ইতঃপূর্বে খবর বেরিয়েছে।