রেনেসাঁ যুগের অমর ইতালীয় ভাস্কর মাইকেলেঞ্জেলো (Michelangelo) ১৫০১-১৫০৪ সাল নাগাদ সেমিটিক পুরাণের অতিকায় দৈত্য গলিয়াথকে পাথরের গুলতি ছুড়ে বধ করা, কিশোর ‘ডেভিড’ বা ‘দাভিদ’-এর ৫.১৭ মিটার বা ১৭ ফুট উঁচু এক মর্মর মূর্তি গড়েছিলেন।
‘দ্য বুক অফ স্যামুয়েল’-এ বর্ণিত অতিকায় দানব গলিয়াথ প্রায় ৪০ দিন ধরে প্রতি সকাল ও সন্ধ্যায় ইসরাইলের অধিবাসীদের দ্বন্দ্ব যুদ্ধে আহ্বান জানালে অবশেষে কিশোর দাভিদ পাথরের গুলতি হাতেই এই দানবকে মোকাবিলা করে ও জয়ী হয়। পুরাণের এই রূপকের আড়ালে অসম প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধেও ‘দুর্বলতর শক্তি’ যে তীব্র জেদ ও নিষ্ঠায় কখনো কখনো জয়ী হতে পারে, তেমন আভাসই মেলে।
অসীম ক্ষমতাশালী বিশ্বব্যাংকের সাথে ‘পদ্মা সেতু’ প্রশ্নে বাংলাদেশের বিজয়ও অনেকটা দাভিদ ও গলিয়াথের লড়াইকেই মনে করিয়ে দেয়। ২০১২ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে বলে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করে যদিও বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে ১.২ বিলিয়ন মার্কিনি ডলার সাহায্য দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
দুর্নীতির সাথে জড়িত হিসেবে সন্দেহজনক সব সরকারি কর্মকর্তাদের অবিলম্বে ছুটিতে না পাঠালে বিশ্বব্যাংক সব সাহায্য বন্ধ করার হুমকিও দেয়। বিব্রত বাংলাদেশ সরকার সাথে সাথেই ‘সন্দেহজনক’ সব সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠালেও বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুত ১.২ বিলিয়ন ডলার সাহায্য ফিরিয়ে নেয়।
পাঁচ বছর পর কানাডার আদালতের রায়ে পদ্মা সেতুর সাথে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ গ্রহণের সব অভিযোগই মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং নির্মাণ সহযোগী কোম্পানি এস,এন,সি, লাভালিনের তিন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও পূর্বের ‘ঘুষ প্রদানের অভিযোগ’ থেকে মুক্ত দেওয়া হয়।