গত নভেম্বর মাসে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশের বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী স্বপরিবারে ঢাকা থেকে বিমানে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর যান। ব্যবসায়িক কারণে ভদ্রলোক ইদানিং কুয়ালালামপুরেই বেশি থাকেন। ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে তিনি তার লাগেজের ভেতরে দশ হাজার ডলার নিয়ে যাচ্ছিলেন। কুয়ালালামপুরে বাসায় এসে দেখেন তার সুটকেস কাটা এবং সুটকেস থেকে শুধু ওই দশ হাজার ডলারই হাতিয়ে নিয়েছে কে বা কারা! ঘটনাটি আমাদের জানানোর সময় তিনি বললেন– স্ক্যানের সময় স্যুটকেসের ভেতরে ডলারের বিষয়টি নিশ্চয়ই দায়িত্বরত কর্মীর নজরে পড়েছিল। তারা কিন্তু তখন একটি কথাও বলেননি। বললে উত্তর রেডি ছিল তার। বিদেশ ভ্রমণের সময় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন যাত্রী ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পারেন বা দেশে নিয়ে আসতে পারেন। সেই হিসেবে তার নেওয়া এই ডলার আইনসিদ্ধ। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি ডলার সঙ্গে না রেখে লেগেজে রেখেছিলেন।
তার চারটি লাগেজের মধ্যে শুধুমাত্র একটি কাটা হলো এবং ডলারের প্যাকেটটি উধাও হয়ে গেলো। এই ঘটনা থেকে তিনি যে ধারণা পোষণ করছেন তা হলো, এ ধরনের অপরাধের জন্য বিমানবন্দরে একটি চক্র আছে যা স্ক্যান থেকে শুরু করে বিমানে মাল ওঠানো পর্যন্ত কর্মীরা জড়িত। বন্ধুটিকে সান্ত্বনা দিলাম এবং ডলারের প্যাকেটটি সাথে রাখা উত্তম ছিল বলে জানালাম। ঘটনাটি এখানেই শেষ।
এবার আমাদের কথায় আসি। ১০ ডিসেম্বর আমার মেয়ে পড়াশোনার জন্যে কানাডার উদ্দেশ্যে কাতার এয়ারলাইন্সে ঢাকা বিমানবন্দর ত্যাগ করলো। তার দুটি লাগেজের মধ্যে একটির পেট বেশ ফুলা ছিল বলেই হবে হয়তো বিমানবন্দর থেকে ভালোভাবে র্যাপিং করে বিমানে উঠিয়ে দিলাম। এক ঘণ্টার ব্যবধানে আমিও স্বপরিবারে কুয়ালালামপুরে আসলাম বাংলাদেশ বিমানে। আমাদের লাগেজ ছিল দুটি। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে লাগেজ সংগ্রহকালে দেখলাম লাগেজ দুটোই কাটা এবং এমন জায়গায় কাটা যা সহজে চোখে পড়ে না। লাগেজ দুটি একেবারে নতুন কিনেছিলাম বলে বেশ কষ্ট পেলাম।
আমাদের লাগেজে শুধু কাপড়ই ছিল; বন্ধুর মতো ডলার ছিল না। হোটেলে উঠে দেখলাম লেগেজ কাটা হয়েছে ঠিকই তবে কিছুই খোয়া যায়নি। ১২ ডিসেম্বর মেয়ে পৌঁছালো টরেন্টোতে। মধ্যরাতে ফোন করে জানালো তার ওই ‘পেট ফোলা লাগেজ’ যেটি মজবুত করে র্যাপিং করে দিয়েছিলাম সেটাও কে বা কারা কেটেছে।