বাংলা চলচ্চিত্র যাঁদের হাতে অনেকখানি আন্তর্জাতিকতা পেয়েছে, তাঁদের অন্যতম পথিকৃৎ তারেক মাসুদ। নিজের শিক্ষা, চিন্তাভাবনা, দর্শন—তিনি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। আজ এই সিনেমার ফেরিওয়ালার জন্মদিন। এ উপলক্ষে তারেক মাসুদকে নিয়ে কথা বলেছেন তাঁর জীবনসঙ্গী, নির্মাতা ক্যাথরিন মাসুদ।
তারেক মাসুদ যখন একটা চলচ্চিত্রের কাজ করত, হাতে হাতে করে কাজটি মানুষের কাছে নিয়ে যেত। যাকে বলে সিনেমার ফেরিওয়ালা। দেশ সম্পর্কে তার চিন্তা, ভালোবাসা—সবকিছু বিলিয়ে দিত নিজের কাজের মধ্যে। তারেক চলে যাওয়ার পর সবাই ভেবেছিলাম, আমরা শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাকে হারিয়েছি। কিন্তু তারেক শুধুই নির্মাতা ছিল না। তাকে আমি বুদ্ধিজীবী বলব না, আসলে বুদ্ধিজীবী শব্দটা তারেক পছন্দ করত না নিজের ব্যাপারে। সে বলত, সে একজন চলচ্চিত্র চিন্তাবিদ। শুধু চিন্তাবিদ নয়, সে একজন দুশ্চিন্তাবিদ।
সমাজ নিয়ে, বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে তার সব সময়ই দুশ্চিন্তা ছিল। সেটা প্রকাশ পায় তার বক্তব্যের মাধ্যমে, তার লেখার মাধ্যমে। যখন কোনো পত্রিকার জন্য আর্টিকেল লিখেছে সারা রাত জেগে, কথায় কথায় আমাকে সে বলত—আমার লেখাগুলো কোনো একটা সময় যদি বই আকারে প্রকাশিত হয়, খুশি হব। তারেকের চলে যাওয়ার পরে আমার দীর্ঘ একটা তালিকা ছিল, কী কী কাজ করতে হবে। তার মধ্যে প্রধান দু-একটির মধ্যে ছিল ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ বইটি বের করা।
ফলে একটু তাড়া করে হলেও প্রথম এক বছরের মধ্যে আমরা বইটার প্রথম এডিশন বের করি। একটাই উদ্দেশ্য ছিল—তারেক মাসুদের ভাবনা, তার কথা যদি মানুষকে বর্তমানে বা ভবিষ্যতে একটু নাড়া দিতে পারে। তাদের ভাবনা, তাদের কাজের ওপর যদি প্রভাব ফেলতে পারে। তাহলে সেই সূত্রে আমরা তারেক মাসুদকে এক অর্থে জীবিত রাখতে পারব।