ডেঙ্গু হলো একটি মশাবাহিত ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত একটি জ্বর রোগ যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রায় সব দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু ভাইরাস প্রধানত এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির স্ত্রী মশা দ্বারা সংক্রামিত হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অল্প মাত্রায় এডিস অ্যালবোপিকটাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। এই প্রজাতির মশা চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার এবং জিকা ভাইরাসেরও বাহক।
পৃথিবীতে প্রতি বছর ৩৯০ মিলিয়ন ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ হয়, যার মধ্যে ৯৬ মিলিয়ন ক্লিনিক্যালি তীব্রতা সহ প্রকাশ পায়। পৃথিবীর ১২৯টি দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও এর ৭০ ভাগ এশিয়ায়। বাংলাদেশের ১৯৬৪ সালে প্রথম ডেঙ্গু হলেও তখন এই রোগটিকে বলা হতো ঢাকা ফিভার। ২০০০ সালে প্রথম চিহ্নিত করা হয় যে এই রোগটি ডেঙ্গু। বাংলাদেশে ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গু হয়েছে তবে এ বছর আক্রান্ত এবং মৃত্যু সংখ্যা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। ডিসেম্বরে এসেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
ডেঙ্গু ফ্লাভিভিরিডি পরিবারের একটি ভাইরাস এবং এর চারটি স্বতন্ত্র, কিন্তু ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত সেরোটাইপ রয়েছে (DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4) যা ডেঙ্গু সৃষ্টি করে। একটি সেরোটাইপ দিয়ে একবার ডেঙ্গু হলে একই সেরোটাইপ দিয়ে আর ডেঙ্গু হয় না। তবে অন্য সেরোটাইপ দিয়ে একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারে যা মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি করে।
ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার কারণে এই রোগটির তেমন নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। আবার ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং এই কারণে যে, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপই ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়। তবে কোনোভাবেই যেন মশার সাথে পেরে উঠছে না মানুষ।