ফিনল্যান্ড, জাপান, নরওয়ে ইত্যাদি দেশগুলোতে স্কুল শিক্ষকতা হচ্ছে ঐ দেশগুলোর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরিগুলোর মধ্যে একটি। এক্ষেত্রে ফিনল্যান্ডের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ফিনল্যান্ডের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে আপনাকে আপনার ক্লাসে প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকতে হবে। এর বাইরে হলে আপনি অ্যাপ্লাই করতেই পারবেন না। শিক্ষকতার প্রশিক্ষণে নানা উল্লেখযোগ্য বিষয়ের ওপর প্রার্থীর মূল্যায়ন করা হয়। যেমন তিনি ক্লাসটা কত ইন্টারেস্টিংভাবে নিচ্ছেন, গ্রুপওয়ার্কগুলো কেমন হচ্ছে, তার ক্লাসে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিচ্ছে কি না বা ঠিকমতো শিখছে কি না ইত্যাদি। এক বছরের এই প্রশিক্ষণে ভাইভা, লিখিত পরীক্ষা আর সবশেষে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা থাকে। এক বছরের প্রশিক্ষণের পর সব প্রার্থীর মধ্যে থেকে বাছাই করে সেরা ১০ প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। ভেবে দেখুন, ইউনিভার্সিটির সেরা ১০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্য থেকে প্রাথমিক বাছাইকৃতদের ছেঁকে মাত্র সেরা ১০ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। তাহলে গাণিতিক হিসাবে ফিনল্যান্ডের সেরা ১ শতাংশ গ্রাজুয়েট আসলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন।
ফিনল্যান্ডের প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের দেশের মতো পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। তারপরও বিশ্বের শিক্ষার মান যাচাইয়ের অন্যতম পদ্ধতি পিআইএসএ (প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট)-এর র্যাংকিং অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা টানা ৯ বছর বিশ্বের সেরা ছিল। গণিত, বিজ্ঞান ও পাঠাভ্যাসের ওপর এই পদ্ধতিটির মূল্যায়ন হয়ে থাকে। পাশাপাশি গান, ছবি আঁকা ও হাতের কাজ শিশুদের শেখানো হয়। অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, এখানে শিশুদের কোনো পাঠ্যবই নেই। এখানকার শিশুরা ৭ বছরের আগে স্কুলে যায় না। স্কুলও সকাল ৯টার আগে শুরু হয় না। স্কুলে দিনে সাধারণত ৩টি থেকে ৪টি ক্লাস হয়। প্রতি ক্লাস ৭৫ মিনিটের। প্রতি ক্লাসের পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিরতি দেওয়া হয়। এতে শিশুরা আগের ক্লাসে যা শিখেছে তা যেন চর্চা করতে পারে, হাঁটা-চলা ও পর¯পরের মধ্যে ভাববিনিময় করে নতুন উদ্যমে পরের ক্লাসটি শুরু করতে পারে। প্রতি ক্লাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী থাকে। হোমওয়ার্কের পেছনেও অন্যান্য দেশের তুলনায় ফিনল্যান্ডের শিশুদের কম সময় ব্যয় করতে হয়।
সেরা শিক্ষাব্যবস্থার আরেক দেশ সিঙ্গাপুর। বর্তমানে দুনিয়ার সেরা। এশিয়ার এই দেশটির বিজ্ঞান শিক্ষাকে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশও অনুসরণ করছে। দেশটি বাজেটের ২০ ভাগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখে। বিজ্ঞানের শ্রেণিকক্ষ গতানুগতিক শ্রেণিকক্ষের মতো নয়। বরং এটি দেখে মনে হবে বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাগার। যেখানে বসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, ক¤িপউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি, সফটওয়্যার বানানো থেকে শুরু করে রোবটিক্স ও অটোমেশনের বিভিন্ন কাজ তারা হাতে-কলমে করে থাকে। একইভাবে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে জীবনস¤পৃক্ত শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখছে।