জীবনে অনুপ্রেরণা পেতে রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের ‘ইফ’ কবিতাটি অনেকেই পড়েন। তিনি শুরুতেই লিখেছেন, ‘যদি তুমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারো তখন/ যখন সবাই মাথা গরম করে...’। কিপলিং চেয়েছিলেন, সবাই যতই মাথা গরম করুক, আস্থা হারাক, তার সন্তান যেন মাথা ঠান্ডা রাখে, তাহলেই এই পৃথিবী হবে তার। আতঙ্কের সময় মাথা ঠান্ডা রাখাটাই আসলে সবচেয়ে বড় সদ্গুণ।
এবার বিষয়টা অর্থনীতির সঙ্গে একটু মেলাতে পারি। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান গত মাসে নিউইয়র্ক টাইমস–এ লিখেছেন, যখন ব্যাংক খাত নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়, তখন কিপলিংয়ের পরামর্শ মেনে আতঙ্ককে অস্বীকার করলে নিজের সব অর্থই বরং খুইয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকে। আতঙ্কের সময় অন্য সবার মতো আতঙ্কিত হওয়াটাই আসলে যৌক্তিক আচরণ।
২.
বেন বার্নানকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ‘নন-মনিটারি ইফেক্টস অব দ্য ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস ইন দ্য প্রোপেগেশন অব দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন’ নামে একটি গবেষণা করেছিলেন। প্রকাশিত হওয়ার ৩৯ বছর পর সেই গবেষণার জন্যই এবার অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন বেন বার্নানকে। তিনি ছাড়াও এবার অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন আরও দুই মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডিবভিগ।
মন্দার সঙ্গে ব্যাংক খাতের সম্পর্ক ও আতঙ্ক নিয়েই কাজ করেছেন এই তিনজন। তাঁরা দেখিয়েছেন, আতঙ্কেরও একটি অর্থনীতি আছে। বেন বার্নানকে মূলত ১৯৩০ সালের মহামন্দা নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি দেখিয়েছিলেন, ব্যাংকের ব্যর্থতার কারণ মূলত আস্থা বা বিশ্বাসের অভাব। এর অভাবেই মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়, তাতেই ব্যাংক দেউলিয়া হয়। অনেকেই ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে সিন্দুকে রাখেন বা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করেন। এতে বিনিয়োগযোগ্য মূলধনের অভাব ঘটে, ফলে মন্দাও দীর্ঘ হয়।
নোবেল পাওয়ার পর এক বক্তৃতায় বেন বার্নানকে এ নিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাত এখন আগের মতো ভঙ্গুর নয়। তবে বিশ্বের অনেক দেশের পরিস্থিতি এ রকম নয়। ফলে যাদের ব্যাংক খাত দুর্বল, তাদের জন্য তা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।