৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, প্রতি চার বছর অন্তর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় মধ্যবর্তী নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ বা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের ৪৩৫টি আসনের প্রতিটিতে এবং সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৫টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও অঙ্গরাজ্যে গভর্নর নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর মোট ৩৬টি অঙ্গরাজ্যে গভর্নর নির্বাচিত করার জন্য ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ মধ্যবর্তী নির্বাচন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। কারণ, এ নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট অবশিষ্ট দুই বছর কীভাবে দেশ চালাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এটি প্রায় প্রথাসিদ্ধ হয়ে গেছে যে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে আগে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। ফলে প্রেসিডেন্টের দল কিছু সিট হারায়। ১৯৩৪ সাল থেকে প্রতিটি মধ্যবর্তী নির্বাচনেই এ প্র্রবণতা দেখা গেছে। তবে এর ব্যতিক্রমও যে হয়নি, তা নয়। এ যাবৎ মাত্র তিনবার মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল আসন সংখ্যা বেশি পেয়েছে এবং গত প্রায় ২২টি মধ্যবর্তী নির্বাচনে ছয়বার সিনেটের আসন সংখ্যা বেড়েছে। এ নির্বাচনের আগে করা এক জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তার হার ৫৩ শতাংশ থেকে কমে ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। এবার আগে থেকে অনুমান করা গিয়েছিল, রিপাবলিকান দল প্রতিনিধি পরিষদের জয়লাভ করবে। এমনকি সিনেটেও খুব অল্প ব্যবধানে তারা জয়লাভ করে যেতে পারে। যখন এ লেখাটি লিখছি, তখন পর্যন্ত সর্বশেষ ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়-প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেট দল পেয়েছে ২০৪টি আসন এবং রিপাবলিকান দল পেয়েছে ২১১টি আসন। সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ডেমোক্রেট দলের আসন গিয়ে দাঁড়াল ৫০টি, অপরদিকে রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা হয়েছে ৪৯টি। সিনেট আসনে এখন শুধু জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ফলাফল বাকি আছে। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে জর্জিয়ায় আবারও ভোটগ্রহণ করা হবে। কারণ, ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ দুটি দলের কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট পায়নি। প্রতিনিধি পরিষদে ৪৩৫টি আসনের মধ্যে ৪১৫টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ২০টি আসন। এ যাবৎ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে যে তথ্য আসছে, তাতে রিপাবলিকানরা খুব বেশি আসনে এগিয়ে থাকবে বলে যে ধারণা করা হয়েছিল, তেমনটি হয়তো না-ও হতে পারে।
এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে যেসব বিষয় প্রভাবিত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয় হলো-অর্থনৈতিক মন্দা, গর্ভপাতের অধিকার, অভিবাসন সমস্যা, সম্প্রতি পাশ করা ২২টি বিধিনিষেধ এবং সাদা ও অন্যান্য বর্ণের মানুষের ভোট দেওয়ার প্রবণতা ইত্যাদি। করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবাদিসহ জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে সে দেশের সাধারণ নাগরিকদের নিত্যদিনের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে; ফলে এর একটি বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জনপ্রিয়তায় টান পড়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ঊর্ধ্বগতির সময় ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট যে হারে সামরিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছেন, এ বিষয়টি সে দেশের নাগরিকরা ভালো চোখে দেখছেন না। রিপাবলিকানরা প্রথম থেকেই ইউক্রেনকে এ হারে সাহায্য দেওয়ার পক্ষে ছিল না।