জীবন এবং শিক্ষা সমভিব্যাহারী। তার রকমফের যা-ই হোক না কেন। উদীয়মান সভ্যতার আলো-আঁধারির কালে শিক্ষা যেমন ছিল, আজও আছে এবং থাকবে হয়তো অনন্তকাল। শিক্ষার ছোট-বড়র তারতম্য নির্ধারণ মূঢ় মানুষের বাহ্যিক বিভাজন মাত্র।
তাই বলে শিক্ষাকে জীবন বিমুখ করতে চাওয়া বোধ করি জীবনাভিসারীর কাজ নয়।
আমরা নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে শিক্ষার তরি ভেড়াতে চাই। ভাবি না সেই শিক্ষা দিয়ে মানবসমাজ কতখানি উপকৃত হবে। আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষা এবং বিদ্যাকে আমরা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ভাবি, তবে গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে শিক্ষা এবং বিদ্যা পৃথক বিষয়। শিক্ষা মানুষের জীবনের প্রাথমিক অনুভবের বিষয়, আর বিদ্যা অনুভবের শিকড় খোঁজা। মূলত এ দুয়ে বিভেদ নেই। আছে সূচনা এবং অগ্রসরের পরিসংখ্যান। প্রদোষকাল কী ছিল তা ভাবার অবকাশের চেয়ে আগামী দিনগুলো কেমন যাবে—তা ভাবাই বোধ করি শ্রেয়। তাই জীবনের সূচনা থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয় বা নেওয়ার জন্য সক্রিয়। ব্যতিক্রম বোধ করি আমরাই। দেখে আসছি, ভাবছি না। না হলে এত ভাঙাগড়া ঘটবে কেন! ঘটছে, আমরা যা শিখেছি, তাকেই ভাবছি সেরার সেরা। বিড়ম্বনা এখানেই। নতুন পথে ধাবিত না হয়ে, যা আছে তাই নিয়ে টিকে থাকা হয়তো যায়, কিন্তু অগ্রসর হওয়া কঠিন। অগ্রসর হওয়া হলো নবজীবনের লক্ষণ। পেছন ফেরা যাবে না। তা নয়, তবে সেখান থেকে উন্নত দিনের জন্য মাল-মসলা সংগ্রহ করা। অর্থাৎ কী করলে পরিণতি কী হয়েছে, তা অবগত হওয়া। অথচ সেদিকে আমাদের দৃষ্টি নেই, আছে আপাত কিছু করে দেখানোর কারিশমা আর আত্মশ্লাঘায় ফুরফুরে হওয়া।