গত ৪ নভেম্বর ১১ ঘণ্টার এক ঝটিকা সফরে চীন ঘুরে এলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ। তাঁর এই সফর নিয়ে খোদ জার্মানিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। পুরো ইউরোপের মনোভাবের ক্ষেত্রেও সে রকম নেতিবাচকভাবে কিছু প্রকাশ্যে আসেনি। ইউরোপব্যাপী ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট, সেই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়াকে বর্জনজনিত জ্ব্ালানি নিরাপত্তা বিষয়টি নিয়ে যখন সংশ্লিষ্ট সবাই দুশ্চিন্তায়, তখন মনে করা হচ্ছে শোলজের এই সফরের পেছনে নিশ্চয়ই কিছু তাৎপর্য রয়েছে।
সফরের আগে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক চীনের ওপর জার্মানির অতিরিক্ত নির্ভরতা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। শোলজ বলেন, কিভাবে অন্যান্য খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কথা বলতে চান তিনি। যেমন—জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, ঋণগ্রস্ততা ইত্যাদি। খোদ তাঁর শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে, এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে কেউ কেউ এটিকে ইইউয়ের ভাঙনের এক ধরনের পূর্বাভাস বলা সত্ত্বেও শোলজের ভাষায়, ‘চীনে সফর করা ঠিক, নাকি ঠিক নয়—এই বিতর্ক সত্ত্বেও এটি সত্য যে চীনের সরকার, রাষ্ট্রপতি এবং আমি একসুরে বলতে পারছি—এই যুদ্ধে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। শুধু এটুকুর জন্যই সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। ’
এখানে উল্লেখ্য যে গত তিন বছরের মধ্যে শোলজই ইউরোপের একমাত্র নেতা, যিনি বেইজিং সফর করলেন এবং তাঁর সফরটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো যখন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে শি চিনপিং আবারও চীনের নেতা হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেন। সেই সঙ্গে এই সফরটিকে গতানুগতিক রাষ্ট্রীয় সফরের ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে ফেলার সুযোগ নেই এ জন্য যে শোলজ তাঁর সঙ্গে দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদলকে নিয়ে গেছেন এবং দুই পক্ষ্যের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হামবুর্গ বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালে চীনের প্রায় ২৫ শতাংশ অংশীদারির বিষয়। এখানে একটি বিষয় অনুধাবন করা প্রয়োজন যে শোলজ নিশ্চয়ই নিজ থেকে এই সফরের মধ্য দিয়ে তাঁর জোট সরকারের শরিকদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না এবং একই সঙ্গে তিনি জার্মানিকে ইইউ বা ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো চেষ্টা করবেন না। যদি এই অনুমান সত্য হয়, তাহলে এটি ধরে নিতে হবে যে এই সফরকে একটি পরীক্ষামূলক সফর হিসেবে দেখা যেতে পারে, যার মাধ্যমে জার্মানি এবং ইউরোপের প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করা যায়। সেই সঙ্গে এখানে আরো একটি বিষয় অনুমেয়, সেটি হচ্ছে অপরাপর ইউরোপীয় দেশগুলোও কি জার্মানির সঙ্গে একই পথে হেঁটে চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নবায়নের মাধ্যমে নিজেদের ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টার অংশ হিসেবে শোলজের এই সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কি না।