স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত নন, এমন অধিকাংশ মানুষের কাছেই প্যালিয়েটিভ কেয়ার অপরিচিত এক নাম। অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নামটি শুধু অচেনাই নয়, বরং নতুনও। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের আভিধানিক অর্থ প্রশমনমূলক সেবা। সাধারণত দুরারোগ্য ও অনিরাময়যোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা থেকেই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের উদ্ভব। ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ, যকৃতের রোগ বা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণা থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্যে প্রশমনমূলক সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
মুমূর্ষু রোগীদের বিশেষ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে হসপিস আন্দোলনের প্রবক্তা ব্রিটিশ নার্স সিসলি সন্ডার্সের হাত ধরেই মূলত ১৯৬৯ সালে প্যালিয়েটিভ সেবার সূচনা হয়েছিল। কিন্তু এর নামকরণ হয় আরো কয়েক বছর পর ১৯৭৪ এ, কানাডিয়ান চিকিৎসক বলফোর মাউন্টের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে গুরুতর অসুস্থ মানুষের জন্যে বিশেষায়িত সেবা হিসেবে প্যালিয়েটিভ কেয়ার ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বিশ্বজুড়েই। তবে, এক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নয়, বরং সামাজিক ও পারিপার্শ্বিকতার সম্পৃক্ততাও মনে রাখা জরুরি।
প্যালিয়েটিভ কেয়ারের অন্যতম দিক হচ্ছে আন্তঃবিভাগীয় চিকিৎসা ও সামাজিক সেবা। একজন মানুষ যখন দুরারোগ্য কোনো গুরুতর রোগে আক্রান্ত থাকেন, তখন তাঁর শুধু যে শারীরিক যন্ত্রণাই হতে থাকে,এমনটা নয়। শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন এবং কষ্ট পেতে থাকেন। এই দু’টিকে একত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ভাষায় বলা হয় সামগ্রিক যন্ত্রণা বা টোটাল পেইন। আবার, আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি তার পরিবারের মানুষদেরকেও অসহনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যু হলে সেক্ষেত্রে শোক সহ্য করার জন্যে যথাযথ কাউন্সেলিং প্রয়োজন। এই সবকিছুই উপশমমূলক সেবার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।