বিদেশি বিনিয়োগের দ্বারা বাংলাদেশের বাজারে বিদেশি পুঁজি প্রবেশের পাঁজি পুথি ঘাঁটলে, টেকনোলজি ট্রান্সফারের প্রকৃত অবস্থার শুমার করলে এবং স্থানীয় শ্রমিকের কর্মসংস্থানের জরিপ ফলাফলের দিকে তাকালে বোঝা যাবে মিশ্র ফল লাভ ঘটেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। বিদেশি পুঁজির নগদ প্রবাহ অতি সামান্য। বিনিয়োগকৃত সিংহভাগ পুঁজি বিদেশি ব্যাংকের ঋণ যা চড়া সুদ ও শর্তের। বেসরকারি খাতে প্রদত্ত বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এ বাণিজ্যিক ঋণের দায়দায়িত্ব বহনের ঝুঁকি থাকছে বাংলাদেশ অর্থনীতির। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিদেশি ঋণ প্রবাহিত হয়েছে কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন যথাযথ সময়ে শুরু করা সম্ভব না হওয়ায় ওই ঋণ রীতিমতো ঝুঁকিতে পরিণত হতে চলেছে। এমন কেসের সংখ্যা বাড়ছে। জয়েন্টভেঞ্চারের কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটাও দেখা গেছে, স্থানীয় অংশীদারের বিদেশি ঋণের দায় বেড়েছে।
সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট প্রকৃতির সরবরাহগুলোয় সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতির মূল্য বেশি ধরা হয়েছে- যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব ও গুণগত মান পূর্বাহ্নে যথাযথ যাচাই সম্ভব না হওয়ায় পরে এগুলো বোঝার ওপর শাকের আঁটি প্রতীয়মান হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে এটাও দেখা গেছে, সহসা সমুদয় বিদেশি ঋণ একত্রে পরিশোধের প্রস্তাব দাখিল হয়েছে বিনিয়োগ বোর্ডে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসনের ঘোষিত সহজ সুবিধাদির আওতায় বিদেশি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে স্থাপিত কোম্পানির মালিকানা কেনাবেচার সমুদয় অর্থ বিনিময় হয়েছে বিদেশে। হুন্ডির মাধ্যমেও প্রত্যাবাসিত হয়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কোম্পানির অর্থ। এমনো দেখা গেছে, কোনো বিদেশি কোম্পানি প্রথমে বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার সুবাদে নিতান্ত সহজ শর্তে ও নামমাত্র মূল্যে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ জমি দীর্ঘমেয়াদি (৯৯ বছরের) লিজ নিয়ে সিমেন্ট সরবরাহের কারখানা স্থাপন করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে দেখিয়ে পরে ওই কারখানার বাণিজ্যিক উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে বিদেশি আরেক কোম্পানিটার কাছে চড়া দামে সমুদয় কোম্পানির মালিকানা ও জমিসহ কারখানা হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে অবহিত না রেখেই। বাংলাদেশের মার্জার অ্যান্ড ইকুইজিশন সংক্রান্ত নীতিমালার বিধান অনুসরণ না করে সেই বিদেশি কোম্পানি তাদের কৌশলগত অবস্থানের কারণে সংশ্লিষ্ট সামগ্রী প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনে বাংলাদেশের একচেটিয়া বাজার দখল করার পথে শুধু নয়, শুধু যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অগোচরে স্থানীয় বিনিয়োগে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত আশপাশের অন্যান্য প্লান্টগুলোও ক্রয় করেছে। কাঁচামাল পুরোটাই আমদানিনির্ভর বিধায় সংশ্লিষ্ট সামগ্রী উৎপাদনে ভ্যালু এডিশন যৎসামান্য। ফিনিশ্ড প্রডাক্ট আমদানি ব্যয় কমে যাবে এ যুক্তি দেখিয়ে সহজে প্রাপ্ত বাংলাদেশের ভূমি, অবকাঠামো ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ঘোষিত সব সুবিধা ভোগ করে সংশ্লিষ্ট সামগ্রীর স্থানীয় বাজার দখল করায় উক্ত খাতে স্থানীয় বিনিয়োগে উদীয়মান শিল্পবিকাশের সম্ভাবনা ক্ষতি ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাজার দখলে বাণিজ্যিক উৎপাদনে স্থানীয় মুদ্রায় অর্জিত লভ্যাংশ পুরোটা বৈদেশিক মুদ্রায় সহজে বিদেশে চলে যাচ্ছে, শুধু প্রক্রিয়াকরণে এ শিল্পকারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এ দেশীয় শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত।