দেশ একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। এ সংকটের সূচনা জ্বালানি সমস্যা থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে ডিজেল আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের ওপর চাপ পড়েছে।
বর্তমান সংকট শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল। এ রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তখন কেউ ভাবতে পারেনি বাংলাদেশ বিদেশি মুদ্রার মজুত নিয়ে সংকটে পড়বে। কিন্তু বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়তে থাকে।
একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কোথা থেকে আসে? একটি দেশ অন্যান্য দেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। দেশের উন্নয়ন সহযোগীরা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশকে যে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়, তাতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, তার মাধ্যমেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানি করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত পড়ে। এক সময় বলা হতো, তিন মাসের পণ্যসামগ্রী আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যদি একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকে, তাহলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়-বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে ঘাটতি নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই Rule of the thumb এখন প্রযোজ্য বলে মনে হয় না।
দেশে অনেক মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিদেশ থেকে অনেক কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। তিন মাসের নিয়মটিতে এত বেশিসংখ্যক মেগা প্রকল্পের কথা হয়তো ভাবা হয়নি। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, প্রতিটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর সিমেন্টের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে এখন বেশকিছু সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সিমেন্ট উৎপাদনে নিয়োজিত আছে। দেশে সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য যে ক্লিংকার ও অন্যান্য কাঁচামালের প্রয়োজন হয়, তা বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না। এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যেহেতু দেশে এখন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রচুর সিমেন্টের প্রয়োজন হয়, সেহেতু এর সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য সিমেন্টের কাঁচামাল বড় পরিমাণে আমদানি করতে হয়। আমদানি ব্যয় কেন বাড়ছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য এ দৃষ্টান্তটিই যথেষ্ট।