খুলনায় বিএনপির সমাবেশে ‘সন্ত্রাসীদের জড়ো’ করার অভিযোগ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু তিনি যে দলের সাধারণ সম্পাদক, সেই দলের সহিংসতার রেকর্ড কী বলে? পরিসংখ্যান যদি সত্য কথা বলত, তাহলে ওবায়দুল কাদের সাহেবের কানে তালা লেগে যেতে পারত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম। গবেষণাপত্রটি দেখিয়েছে, ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সংঘটিত মোট রাজনৈতিক সহিংসতার ৩০.২ শতাংশ ঘটনায় আওয়ামী লীগ জড়িত ছিল। এই সময়ে যত লোক আহত হয় তার ৩৭.৭ শতাংশ লোক এসব সহিংসতায় আহত হয়েছেন। একইভাবে মোট প্রাণহানির ২২.৩ শতাংশ প্রাণহানি হয় আওয়ামী সহিংসতায়। অন্যদিকে বিএনপির ভাগ ছিল কম, ২৫.২ শতাংশ। তাদের কারণে আহত ও নিহতের অনুপাতও কম, যথাক্রমে ৩৪.৩ শতাংশ ও ১৫.৬ শতাংশ (দেখুন, প্রতিচিন্তা, জুলাই-সেপ্টেম্বর সংখ্যা, ২০২২)।
ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিএনপির সমাবেশ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সহিংস বাধার মুখেও একরকম সফল। রাজনীতি ও সমাজতত্ত্বে আগ্রহীদের জন্য এখানে বেশ কিছু ইঙ্গিত আছে। ছোট করে এখানে কয়েকটি দিকের কথা বলা যাক।
হাঁটাপথের অচেনা: ফজল আলীরা আসছে?
কিন্তু যাঁরা সত্যি সত্যি জড়ো হয়েছিলেন—টেলিভিশন, পত্রিকা আর ফেসবুকের তথ্য থেকে বলছি, তাঁদের বাহন ছিল ইজিবাইক, অটো, নৌকা, ট্রলার। বাসে-ট্রেনে করে আসতেও তাঁরা পদে পদে বাধা পেয়েছেন, মার খেয়েছেন এবং এত কষ্ট করে আসছিলেন কাকে দেখার জন্য? বিএনপির শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া তো কার্যত গৃহবন্দী। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশান্তরী। জনসভায় যাঁকে দেখার জন্য সাধারণত মানুষ আসেন, তেমন কেউ ছিলেন না মঞ্চে। কেবল ছিল একটি শূন্য চেয়ার। সেই শূন্য চেয়ারটি হয়তো অনুপস্থিত গণতন্ত্রের কথাই বলছে। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেটা খালি রেখেছিলেন খালেদা জিয়ার জন্য। সুতরাং ওই খালি চেয়ার দেখতে কেউ আসেননি। প্রথম আলোর সংবাদ বলছে, জনসভার আগের দিন বিকেল থেকে পরের দিন সকালেও খুলনার মোড়ে মোড়ে মানুষের যে জটলা, তাঁরা খুঁজছিলেন তাঁদের এলাকার মানুষ। ছোট ছোট গেরিলা দলের মতো লুকিয়ে চুরিয়ে যাঁরা এসেছিলেন, প্রায় বিনা ব্যতিক্রমে তাঁদের মোবাইল ফোনটি ব্যস্ত ছিল তাঁদের এলাকার অন্য অন্য গ্রুপগুলোর খোঁজ করায়। তাঁরা কি এসে পৌঁছালেন? তাঁরা কি নিরাপদ? কে আসতে পারলেন আর কে পারেননি!