কয়েক দিন আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনাসভায় বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে দেশ চলবে না কারো কথায়। ’ তবে আরেক নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর দাবিও কিন্তু কম নয়। তাঁর মতে, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং তারপর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। এ ব্যাপারে তাঁরা আর কোনো ছাড় দেবেন না, স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন।
তাঁদের বক্তব্য থেকে আমাদের মতো আমজনতা যতটুকু অনুধাবন করতে পেরেছে তা হলো, ১০ ডিসেম্বরের পরে যেকোনো এক শুভ মুহূর্তে বিএনপি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে, যার শীর্ষে রাখা হবে (ধারণা করছি) রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেগম জিয়াকে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁরই সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমানকে। যেহেতু তাঁদের নির্দেশে দেশ চলবে, তাই এই দুটি পদে তাঁদেরই যে আসীন হতে হবে। কত সহজেই কী সুন্দর ব্যবস্থাটাই না এই দুই নেতা উদ্ভাবন করেছেন! কোনো নির্বাচনের প্রয়োজন নেই, জনগণের সম্মতির বাধ্যবাধকতা নেই, একেবারে সরাসরি দেশের দায়িত্ব গ্রহণের এমন সুবর্ণ সুযোগের বিষয়টি তাঁরা জনগণের সামনে সদম্ভে হাজির করেছেন। কমপক্ষে একটি বাহবা যে তাঁদের দিতেই হয় গণতন্ত্রে এই নতুন ধারাটি সংযোজন করার জন্য। নতুন ধারা বলা সম্ভবত ভুলই হয়ে গেল। কারণ এই ধারায়ই যে রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে তাঁদের দলের জন্ম দেওয়া হয়েছিল।
যা হোক, পরে জনাব আমান কিছু একটা উপলব্ধি করে নিজের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভিন্নভাবে। তাঁর কথায় জনগণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই জনগণের দাবি অনুযায়ী তাঁরা মাঠে নেমেছেন। রাজনীতির মাঠ বলে কথা! বিশাল মঞ্চে উঠে বসলেই মনটা কেমন যেন আনচান করতে থাকে। ‘মুই কি হনু রে’ ভাবটা চাঙ্গা দিয়ে ওঠে। পুরো দেশ আর দেশের মানুষকে কথার জাদুমন্ত্রে সম্মোহিত করার এমন অপার সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে? তখন কি আর দিগ্বিদিক জ্ঞান থাকে? যা কিছু মনে আসে তা-ই বলে ফেলা যায় বুক ফুলিয়ে। রাজনীতিতে নির্ভয়ে এমন ‘ফ্রি স্টাইল’ বক্তব্য দেওয়া হয়তো একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব।