আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের বাজারের বিগত কয়েক মাসের মূল্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে প্রতি ব্যারেলে মূল্য ৬৮ ডলার থেকে ১২০ ডলারে ওঠানামা করেছে। গড় হিসাবে মূল্য আনুমানিক ৮৪ ডলার ছিল, গত নভেম্বর থেকে এক বছরে গড়ে মূল্য বৃদ্ধি সর্বোচ্চ ১২-১৫ শতাংশ। ইউক্রেনে হামলার মুহূর্তে অল্প সময়ের জন্য ১২০ ডলারে উঠে আবার কমেও এসেছে।
বিপরীতে বাংলাদেশে ডিজেলের দাম নভেম্বরে ২৩ শতাংশ এবং আগস্টে সাড়ে ৪২ শতাংশ; এক বছরের কম সময়, অর্থাৎ মাত্র ৯ মাসে সাড়ে ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। অথচ এই বছরে তেলের দাম একবার ব্যারেলে ৬৫ ডলার এবং আরেকবার ৮০ ডলারে নেমেছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমেনি।
যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে, সরকার দেশে প্রাথমিক জ্বালানি ডিজেল, ফার্নেস তেল, গ্যাস, কয়লা ইত্যাদির দাম বাড়ায়; যখন স্থির থাকে বা কমে, তখন সেকেন্ডারি জ্বালানি, অর্থাৎ বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। ১২ বছরে বিদ্যুতের দাম অন্তত আটবার বেড়েছে, এই সময় ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা থেকে ১৩০ টাকা হয়েছে।
এরপরও সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লোকসান করছে, কখনো কখনো দিনেই ১০০ কোটির বেশি লোকসান। কেন?
১. আনুকূল্য পাওয়া ব্যবসায়ীদের পকেট ভারীর জন্য চুক্তির ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এসব চুক্তিতে ৭, ৯, ১২, ১৫, ২২ এ রকম যথেচ্ছ বিদ্যুতের দামে নির্ধারিত হয়েছে। যে কোম্পানি যা পেরেছে বাগিয়ে নিয়েছে, কোনো বিধিবদ্ধ নীতি ছিল না।
২. ক্যাপাসিটি চার্জ বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া ১৪ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই কিছু কোম্পানি এই অর্থ পেয়েছে। অথচ জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের সময় অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোই যায়নি। অর্থাৎ এসব কেন্দ্রের সক্ষমতা একদিকে বাড়িয়ে দেখানো, অন্যদিকে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনেও অক্ষম। অথচ প্রতি ইউনিট বেশি দামে বিক্রি, ক্যাপাসিটি চার্জ, আমদানিতে শুল্ক ছাড়া, সহজ সুদে ব্যাংক ঋণসুবিধা, জমি ক্রয়ে সুবিধা-কী পায়নি তারা!
৩. ওপেক, ওপেক প্লাস দেশগুলো থেকে তেল ও গ্যাস কেনার বড় ও স্থায়ী সরবরাহ চুক্তি নেই। বড় তেল উৎপাদনকারী নয় এমন দেশ, যেমন চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তি। অর্থাৎ জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে।