পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ঘটনায় জাতীয় নির্বাচনের আগে ফের আলোচনায় আস্থা সংকটে থাকা নির্বাচন কমিশন। এসব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
আলী ইমাম মজুমদার : নির্বাচনী আচরণবিধি আইনের ভেতরে এটা থাকার কথা। যেহেতু আচরণবিধি আছে সেহেতু আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তির বিধানও থাকার কথা। এই মুহূর্তে নির্বাচনী আচরণবিধি আইন না দেখে বলতে পারছি না। যদি না থাকে তাহলে অসম্পূর্ণ আইন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অগ্রসর হওয়া ঠিক না। সেক্ষেত্রে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা তাদের আছে। আইনে কোনো অসম্পূর্ণতা থাকলে সেটা পূরণ করে নিয়েই ইসিকে আগাতে হবে।
সংবাদমাধ্যমে যতটুকু দেখি তাতে মনে হয় আমাদের বিভিন্ন সহযোগী দেশ বিশেষ করে পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক দেশগুলো এ ব্যাপারে খুব কনসার্ন মনে হয়েছে। এদেশে যাতে মানবাধিকার যথাযথভাবে রক্ষিত হয়, আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয়, এগুলো নিয়ে তারা পরিষ্কারভাবে সচেতন। বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে যেমন সম্পর্কিত, তেমনি তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক বাণিজ্যিক সম্পর্কও আছে। বাণিজ্যিক সম্পর্কটা অনেকাংশেই একমুখী। আমরা বিক্রেতা, তারা ক্রেতা। তাছাড়া তারা তো খারাপ কিছু বলছে না। ফলে নির্বাচন নিয়ে তাদের এসব কথাবার্তাকে ইগনোর না করার মতো বাস্তবতাও রয়েছে।
তাদের দল যখন বিরোধী দলে ছিল তখন তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমনওয়েলথ থেকে দুজন প্রতিনিধি নিয়ে এসেছিলেন। তারাও করেছেন আর এখন যারা বিরোধী দলে আছেন তারা করছেন। কেউ তো বাকি রাখেননি বিদেশিদের কাছে যেতে। আজকের পৃথিবীতে কোনো ব্যাপারই বিচ্ছিন্ন না। সবাই একে অপরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ফলে আমাদের কোনো ব্যাপারে তারা ন্যায়সংগত পরামর্শ দিলে, সেটা শোনা যাবে না আবার পরামর্শ দিলেই তার ষোলো আনাই মেনে নেব এমন কোনো কথা নেই। যেটা ন্যায্য সেটা শুনব না, এটা তো ঠিক না। তাদের সঙ্গে কথা বলব না, এটাও ঠিক না।
এটা তো সবে মাত্র শুরু। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে কমিশন পর্যবেক্ষণ করেছে একটি আসনে নির্বাচনের কয়েকটি কেন্দ্র। এখন জাতীয় নির্বাচন হবে একই দিনে ৩০০ আসনে। এতগুলো আসনের সবগুলো ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো সম্ভব কি না আর সেগুলো যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব কি না এটা কমিশনের চিন্তা করতে হবে। আমার বিবেচনায় এটা সম্ভব না। এছাড়া, গাইবান্ধার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিল ৩ হাজার। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে একদিনেই যেহেতু ভোট হয়, সেহেতু গোটা দেশের সবগুলো আসনে ৫০০ করে জনবল নিয়োগ দেওয়াও কঠিন। সুতরাং আমি যেটা মনে করি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা যখন নির্বাচন করেছি তখন এইভাবে জনবলেরও দরকার হয়নি, ঢাকা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণেরও দরকার হয়নি। কিন্তু সেগুলো কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী হয়েছে।