ইন্দিরা গান্ধীকে যেন মনে করিয়ে দেন নাতনী প্রিয়াঙ্কা ভদ্র

আমাদের সময় প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:২০

অনেক কিছুতেই মিল আছে দুজনার। তাঁর শাড়ি পরার ধরন, হাসি, চুলের ছাঁট, হাত নাড়ানোর মুদ্রা— এ সবই যেন অবিকল এক। ঠাকুরমা ইন্দিরা গান্ধীকে যেন মনে করিয়ে দেন নাতনী প্রিয়াঙ্কা ভদ্র। চ্যানেল আইসব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি রাজীব গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অবশেষে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিতে চলেছেন।ভারতে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের মাত্র মাস তিনেক আগে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।তাঁর ভাই ও বর্তমানে দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই প্রিয়াঙ্কাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ক্যারিশমাটিক প্রিয়াঙ্কা যাতে কংগ্রেসের হাল ধরেন তার জন্য গত প্রায় দুদশক ধরেই ধরেই দলের নেতা-কর্মীরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন।দলের দুর্যাগ-দুঃসময়েও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মেঘনাদের মতো পিছন থেকে কাজ করছিলেন। এবার আর লুকোচুরি নয়, সরাসরি তাঁকে রাজনীতিতে নামিয়েই দিল কংগ্রেস। দাদা রাহুলের ডাক শেষ অবধি ফেলতে পারলেন না প্রিয়াঙ্কা। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই উত্তর প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসীন হয়ে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। শোনা যাচ্ছে, তিনি আগামী লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।সোনিয়া-কন্যার রাজনীতিতে আসার খবরে স্বাভাবিক কারণেই উচ্ছ্বসিত কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা৷ তাঁর রাজনৈতিক উপস্থিতি, ব্যক্তিত্ব বা প্রতিপক্ষর টক্কর নেওয়ার ক্ষমতা ধরলে প্রিয়াঙ্কা অবশ্যই কংগ্রেসের জন্য সম্পদ।এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে দেখা গেল, দলের কর্মীরা এতটাই উচ্ছ্বসিত যে তাঁর সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই মন্তব্য করছেন, ‘দুসরি ইন্দিরা গান্ধী আয়ি হ্যায়’ অর্থাৎ দ্বিতীয় ইন্দিরা গান্ধী এলেন!শুধু চেহারা নয়, ব্যক্তিত্বেও ইন্দিরার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার সামঞ্জস্য রয়েছে। অপেক্ষাকৃত নবীন প্রজন্মের কাছেও তাঁর ব্যক্তিত্ব ও ক্যারিশমা প্রায় লোককথার মতো। অমেথি-রায়বেরলীর মাঠঘাট-চৌরাহায় শাড়িপরিহিতা প্রিয়াঙ্কাকে মাঝে মাঝে দেখা গেলেও বেশির ভাগ সময়েই তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।সেটা জন চিত্তে তাঁর আকর্ষণকে আরও বাড়িয়েছে। রাজীব-হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত নলিনী মুরুগনের সঙ্গে তাঁর সেলে গিয়ে দেখা করা এবং ক্ষমা প্রদর্শনের ঘটনা জনমনে প্রিয়দর্শিনী প্রিয়াঙ্কার চরিত্রে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।সর্বভারতে রয়েছে তাঁর একটা পজিটিভ ইমেজ। সব মিলিয়ে প্রিয়াঙ্কা ভারতীয় রাজনীতিতে ইন্দিরার দলকে আবারও ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করবেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন।কংগ্রেস আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে প্রিয়াঙ্কাকে কাজে লাগাতে চাইছে। আর তাই পূর্ব উত্তরপ্রদেশের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার দায়িত্বভারই অর্পণ করা হয়েছে৷তবে গেরুয়া শিবির ইতিমধ্যেই রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কার আগমন নিয়ে পরিবারতন্ত্র ইস্যুকেই ফের খুঁচিয়ে তুলেছে৷ বিজেপির এক মুখপাত্র বলেছেন, বিজেপি দলকেই পরিবার মনে করে, কিন্তু কংগ্রেস পরিবারকেই দল মনে করে৷রাহুল গান্ধীর ব্যর্থতা কংগ্রেস স্বীকার করে নিয়েছে বলেও দাবি করেন বিজেপির এই মুখপাত্র৷অন্যদিকে কংগ্রেসের এমপি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, প্রিয়াঙ্কাকে রাজনীতিতে বারবারই চেয়েছে আমজনতা৷ মানুষ তার কথা শুনতে চায়৷ সেই চাওয়া থেকে বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়েছে৷এটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত৷ আগামিদিনে দলকে শক্তিশালী করবে৷ মোদী সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে৷সক্রিয় রাজনীতিতে না নামলেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বেশ কয়েক বছর আগে থেকে মা ও দাদার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছেন। কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিলেও কংগ্রেসের কোনও পদ তিনি নেননি।৪৭ বছরের প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট ভদ্র হলেন ব্যবসায়ী। ১৯৯৯ সালে তিনি উত্তর প্রদেশের আমেথিতে মা সোনিয়া গান্ধীর প্রচার দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। সে বার সোনিয়া গান্ধীর প্রচারের বেশির ভাগ বক্তৃতাও লিখে দিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা।এত দিন ধরে প্রিয়োঙ্কা নিজের মা ও ভাই-এর প্রচারেই ব্যস্ত ছিলেন। বিশেষ করে তাঁকে আমেথি এবং রায়বেরলির প্রচারে দেখা গিয়েছে। এবার তাঁকে সেই অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র বারাণসীও পড়ছে পূর্ব উত্তর প্রদেশের মধ্যে।সোনিয়া-পুত্র রাহুলের নেতৃত্বে গুজরাটসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে হারের পর তিনটি বড় রাজ্য বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। রাহুলও রাজনেতা হিসাবে পরিণত হয়েছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে অলআউট খেলতে প্রিয়াঙ্কা-তাস খেলে দিলেন রাহুল। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কা কতটা সফল হন সেটা সময়ই বলবে।অনেকে অবশ্য রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কার আগমন কংগ্রেসের জন্য আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে চমকপ্রদ কোনো ফল নাও ফলতে পারে বলে মন্তব্য করছেন।পরিবারতন্ত্র, তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ-বিজেপির এসব প্রচারণারে বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জয় পাওয়াটা ভারতের মতো পশ্চাৎপদ সমাজে খুব একটা সহজ হবে না। কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে প্রবেশে আখেরে লাভ হবে বিজেপির। তার ফল আগামী নির্বাচনে পাবে গেরুয়া শিবির। রাহুল গান্ধীর এই চালে নরেন্দ্র মোদীর ফের গদিতে ফেরা নিশ্চিত হতে পারে।কেন এমন বলছেন বিশেষজ্ঞরা? উত্তরপ্রদেশে মোট ৮০টি বিধানসভা আসন। এই আসনগুলির ওপরই নির্ভর করবে বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসবে কিনা। ২০১৪ সালে মোদী ঝড়ের কারণে এই রাজ্যে ৭১টি আসন জেতে একা বিজেপি। এনডিএ জোট পায় মোট ৭৩টি আসন।এবার তাই বিজেপির জেতার জন্য যতটা সাহায্য উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রয়োজন, তেমনই বিজেপিকে হারাতে গেলেও বিরোধীদের ঠিক ততটাই সাহায্য প্রয়োজন। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশই ঠিক করতে চলেছে কোন দলের নেতা বসবেন প্রধানমন্ত্রীর তখতে।প্রিয়াঙ্কা কংগ্রেসের রাজনীতিতে আসায় বিজেপির লাভ তাহলে কীভাবে? কীভাবে বিজেপির জয় সহজ করবেন প্রিয়াঙ্কা? বলা হচ্ছে, প্রিয়াঙ্কার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি তপশিলি জাতি, উপজাতি ও পিছিয়ে পড়া নারী ও যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে। এই অবস্থায় সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির ভোটব্যাঙ্কও এই অংশের জনগণই। তাই প্রিয়াঙ্কাকে দেখে তাঁরা কংগ্রেসকে ভোট দিলে তা ভাগাভাগি হয়ে আখেরে লাভ হবে বিজেপিরই।উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির জোট কংগ্রেসের সঙ্গে না গিয়ে একলা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে চলেছে লোকসভা ভোটে। তার পাল্টা কংগ্রেস জানিয়েছে, রাহুলের দলও সবকটি আসনে লড়বে। এই অবস্থায় বিজেপির বিরোধীরা এমনিতেই ভোট ভাগাভাগি করে ফেলছেন। তার ওপরে প্রিয়াঙ্কার প্রবেশ বিজেপির আরও সুবিধা করে দিল।তবে সব কিছুই যে ছক মেনে হবে তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আর শেষ মুহূর্তে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে একটা রফা করেও ফেলতে পারেন রাহুল। ইতিমধ্যেই তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিজেপিকে হারানোর লক্ষ্য কংগ্রেসের, আর সেক্ষেত্রে মায়াবতী-অখিলেশকে সহযোগিতা করার কথাও ভাবা যেতে পারে৷ আর এখানেই জোটের ইঙ্গিত উঠে এসেছে।রাহুল-প্রিয়াঙ্কার কংগ্রেস যদি বিজেপি-বিরোধী বৃহত্তর জোট গড়ে কিংবা সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, পুরো ভারতেই গেরুয়া-শিবিরের জয়-রথ থেমে যেতে পারে।দুই ভাইবোন মিলে কংগ্রেসকে কতটা এগিয়ে নিতে পারেন, প্রিয়াঙ্কা সত্যিই ইন্দিরা হতে পারেন কি-না তা বোঝা যাবে আগামী মে তে, লোকসভা নির্বাচনে। ততদিন কংগ্রেস সমর্থকদের পাশাপাশি রাজনীতি অনুসন্ধিৎসু সকলকেই অপেক্ষা করতে হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us