গত মঙ্গলবারের দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করে চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের একটি উক্তি মনে পড়ল। তার কথার অর্থ করলে দাঁড়ায়-তরতরিয়ে ওপরে ওঠার নাম কৃতিত্ব নয়; কোনো কারণে গর্তে পড়ে গেলে কত কম সময়ে উঠতে পারো, তার নাম কৃতিত্ব। বর্তমান সময়ে তরতরিয়ে উন্নয়নের কীর্তন শুনেছি অনেক; কিন্তু বিপর্যয় থেকে খুব সহজে মুক্ত হওয়ার উপায় আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে বড় ধরনের বিভ্রাট দেখা দেওয়ার কারণে গত মঙ্গলবার দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। এদিন জাতীয় গ্রিড ট্রিপ হওয়ায় দুপুর ২টা ১৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ডুবেছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় সব জেলা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের হাসপাতালগুলোয় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়; প্রায় অচল হয়ে পড়ে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা; শিল্প-কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে; আদালত চলেছে মোমবাতি জ্বালিয়ে; ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো ছিল অচল; পূজামণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হয়েছে; জেনারেটরের ডিজেল কিনতে পাম্পগুলোতে ছিল ভুক্তভোগী মানুষের উপচে পড়া ভিড়; অফিস, বাসাবাড়ি, মসজিদে বন্ধ ছিল পানি সরবরাহ।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন রাজধানীর বহুতল ভবনের বাসিন্দারা। পানি সরবরাহ ও লিফট না থাকায় ভবনগুলোতে বসবাসকারী নারী-শিশু-বয়স্ক মানুষগুলো পড়েন চরম দুর্ভোগে। দেশের ৩২ জেলায় পুরোমাত্রায় ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না; কোনো কোনো অঞ্চলে ভোগান্তির মাত্রা ছিল ৮ ঘণ্টারও বেশি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার সময় বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটে। তবে সেটি কেন হয়েছে, তা বলতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঘটনা অনুসন্ধানে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ নিয়ে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে জাতীয় গ্রিডে দ্বিতীয়বারের মতো বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটল। এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপত্তি ঘটেছিল। সে সময়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল। তবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর। তখন গোটা দেশ প্রায় ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিল।