গত সেপ্টেম্বর মাসে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কাজে গিয়েছিলাম। বিকেল সোয়া চারটায় একটি বাসে রংপুরে ফেরার কথা ছিল। বেলা সাড়ে তিনটায় জানলাম বাসটি যাবে না। অগত্যা পাবনা থেকে নাটোরে এসে রাজশাহী থেকে রংপুরগামী বাসের অপেক্ষায় ছিলাম।
স্টপেজে এক ব্যক্তি জানালেন, ‘জেকে স্পেশাল’ নামের একটি বাস রাজশাহী থেকে রংপুর যাবে। দু-চার মিনিটের মধ্যে ওই নামের বাস চলে আসে। ওঠার জন্য এগিয়ে যেতেই জানলাম, এটা সে বাস নয়। অথচ ‘জেকে স্পেশাল’ নামে ওই বাসের গায়ে লেখা রাজশাহী-রংপুর। বাসটি চলে যাওয়ার পরপরই রাজশাহী থেকে অভিন্ন নামে আরেকটি বাস এল। ওই বাসে উঠলাম। আগের বাসটি সম্পর্কে সুপারভাইজার বললেন, ‘ওই বাসটি ভুয়া। যাবে বগুড়া।
কিন্তু যাত্রী নেবে রংপুরের। বগুড়ায় গিয়ে যাত্রী নামাবে। যাত্রীর ভোগান্তি হবে।’ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, কোনো উপায় নেই। মালিক নাকি খুব পাওয়ারফুল। এ রকম প্রতারণামূলক বাসগুলো সাধারণত মূল বাসগুলোর সর্বশেষ গন্তব্যের আগের দু–এক স্টপেজ পর্যন্ত যায়। প্রতারিত হন যাত্রীরা।
এ বাস্তবতা দেশের অসংখ্য সড়কে। ২৫ বছর আগের একবার রাজশাহী যাওয়ার কথা মনে পড়ল। রংপুরের মডার্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে সময় ‘আগমনী’ নামে একটি বাস রাজশাহী যেত। বাসটির যাত্রীসেবা ভালো। প্রায় একই রকম একটি বাস চলে আসে। আমি ওই বাসে উঠি।
বাসের গায়ে লেখা রাজশাহী, ডাকল রাজশাহী নামে, ভাড়াও নিল রাজশাহীর। কিন্তু লক্ষ করলাম, সার্ভিস অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে খুবই খারাপ। বাস বগুড়া পর্যন্ত যাওয়ার পর বলল আর যাবে না। আমার সঙ্গে কিছুটা বাগ্বিতণ্ডা হয়েছিল। যখন বললাম ‘আগমনী বাসের এত অধঃপতন হয়েছে!’ তখন একজন বললেন, এটা তো ‘আগমনী’ নয়, ‘আগমন’। বাসের গায়ে তাকিয়ে দেখলাম, সত্যি তা–ই। এমনভাবে লেখা, বোঝা কঠিন এটি ‘আগমন’ নাকি ‘আগমনী’ বাস। তারপর থেকে বাসের নাম ভালো করে দেখে বাসে ওঠার চেষ্টা করি। একই বাসে একাধিক নামও ব্যবহার করা হয়। সামনে একটি, পাশে একটি ও পেছনে একটি।
সড়কে যেসব গাড়ির সেবার মান ভালো, মানুষেরও আস্থা আছে, সেসব কোম্পানির নাম ব্যবহার করে অনেকেই বাস চালাচ্ছেন। যে স্থানে বাস যাবে না, সেই স্থানের নাম গাড়িতে ব্যবহার করে। সরল বিশ্বাসে যাত্রীরা ওঠার পর বিপদে পড়েন। বাসে তুলে গন্তব্যে না গিয়ে মাঝপথে নামিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রীদের কিছুই করার থাকে না।