বাংলাদেশের মেয়েরা দূর্বা ঘাসের মতো। এ ঘাস সবচেয়ে কোমল, কিন্তু কঠিন জীবনীশক্তি এর। শালবৃক্ষ মরে যায়, দূর্বা ঘাস নীরবে ছড়ায়। সেই দূর্বার মতো মেয়েরা এবার ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার শিরোপা জয় করেছে। সুযোগ পেলে এরা সেরাটা দেয়, বাধা পেলে এরা দূর্বা ঘাসের মতো টিকে থাকতে জানে।
গ্রাম-গরিবের আধুনিক রূপকথা
পোশাকশিল্পে সাফল্যের অন্যতম একটা কারণ বাংলাদেশের মেয়েদের আঙুলের বিশেষ রকমের নমনীয়তা। ফুটবলার মেয়েরা দেখাল, পায়ের জাদুতেও তারা এগিয়ে। সাফ কাপের চ্যাম্পিয়নরা সবাই গ্রামের গরিব পরিবারের মেয়ে। শহুরে মধ্যবিত্তদের চেয়ে কি তারা কম সাহসী, কম প্রগতিশীল? গ্রামীণ রক্ষণশীলতার মিথ ভেঙে দিয়েছে এসব মেয়ে, তাদের পরিবার ও তাদের শিক্ষকেরা। আর কী সুন্দর এই মেয়েদের নাম, কী কাব্যিক একেকটা গ্রাম: কলসিন্দুর, বাঁশজানি, সদ্যপুষ্করিণী!
একটি বিদ্যালয়, একজন শিক্ষক, বিরাট চমক
চ্যাম্পিয়নদের আটজনই ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের একটি গ্রামের সন্তান। তাদের প্রেরণা ছিলেন কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মফিজ উদ্দিন। নিজে খেলোয়াড় হতে পারেননি, কিন্তু ছাত্রীদের স্বপ্নপূরণের জাদুকর ঠিকই হয়েছেন। সাফ কাপের ধূমকেতু সাবিনা। সাতক্ষীরার সাবিনা ও মাসুরার পেছনে ছিল স্থানীয় কোচ আকবর আলীর সাধনা। ঝিনুকের ভেতরে জমা কষ্টের মুক্তাটা তিনি বের করে এনেছেন। কিন্তু হায়, গত জুন মাসে যখন বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি তাঁকে পুরস্কৃত করবে, এর আগের দিনই তিনি চিরবিদায় নিলেন। কোচের হয়ে সে পুরস্কার নিতে গিয়ে সেদিন খুব কেঁদেছিল সাবিনা।
চার গোল করা সিরাত জাহান স্বপ্নার বাড়ি রংপুরের সদ্যপুষ্করিণী গ্রামে। স্বপ্নার বাবা মাথা গোঁজার ঠাঁইহীন একজন বর্গাচাষি। সেই ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো জ্বালাতে এগিয়ে আসেন পালিচড়া গ্রামের ২৬ বছর বয়সী তরুণ কোচ মিলন খান। তাঁর আগে ছিলেন হারুন অর রশীদ। তাঁরা যেন মফিজ উদ্দিনেরই আরেক রূপ।
কিশোরী মনের ঝোঁক দূর্বা ঘাসের মতোই অজেয়। লুকিয়ে-চুরিয়ে ফুটবল খেলা, বকা শোনা। আবারও খালি পেটে খেলতে যাওয়া। এবারের শিরোপাজয়ী খেলোয়াড় রূপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, আনুচিং মগিনি ও মনিকা চাকমাদের গল্পটাও এমনই করুণ। ২০২১ সালে ভারতকে হারানো তারকা আনাই মগিনিসহ এই পাঁচজনই রাঙামাটির একটি বিদ্যালয়ের ছাত্রী।