অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে ২০২০ সালে অবসরের পর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের এই ফেলো ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৯৮৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি এবং ১৯৮২ সালে থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদকপ্রাপ্ত মোহাম্মদ কায়কোবাদের জন্ম ১৯৫৪ সালে মানিকগঞ্জে।
মোহাম্মদ কায়কোবাদ: বর্তমানে চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে। হঠাৎ করে কীসের ভিত্তিতে সময় কমানো হচ্ছে? যদি এমন কোনো গবেষণা হতো, যার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে চার বছরের প্রয়োজন নেই, তিন বছরেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছে কিংবা চার বছরের দক্ষতা তিন বছরেই অর্জন সম্ভব তাহলে এটা নিয়ে কথা বলা যেত। যদিও আমি বিশ্বাস করতে চাই কোর্সের সময়কালের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের পেছনে যথেষ্ট গবেষণা করা হয়েছে; তবে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৭৮ শতাংশ আসন খালি থাকার বিষয়টি একদিকে এ শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কম থাকার পরিচায়ক বটে এবং এটা আমাদের একটি শঙ্কার কারণ। নানা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অর্জিত বিদ্যার ব্যবহার পেশাজীবনে ব্যবহার করতে না পারার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা লাভ করে সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর সঙ্গে আরেকটি বিষয় দেখা দরকার। দেখা যাচ্ছে সরকারি পলিটেকনিকগুলোর আসন পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু খালি রয়েছে বিপুল বেসরকারি পলিটেকনিকের আসন। বেসরকারি পলিটেকনিকে শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হওয়ার কারণ একটা হতে পারে- ফি বেশি। আবার সেগুলোয় শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকার কারণেও শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হচ্ছে না।
কারিগরি শিক্ষার প্রতি সরকার গুরুত্ব দিয়ে আসছে, এটা অন্তত কর্তাব্যক্তিদের কথায় স্পষ্ট। কিন্তু বাস্তবে এ শিক্ষার জন্য জরুরি করণীয় অনেক জায়গায়ই হাত দেওয়া হয়নি। এমনকি গুরুত্বের সূচক হিসেবে আমরা যদি দেখি বাজেটেও এ শিক্ষার বরাদ্দ অনুদার কিংবা যথাযথ নয়। এখানে বরাদ্দ না বাড়ালে কীভাবে উন্নয়ন সম্ভব? তা ছাড়া প্রশাসনিক অন্যান্য বিষয় যদি আমরা দেখি, কীভাবে এতসংখ্যক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হলো? শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠানকে চলতে দেওয়া কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নয়। আমার মনে হয়, বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর মানসম্মত কিংবা গ্রহণযোগ্য করতে নিবিড় যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে প্রচার-প্রচারণায়ও ঘাটতি কম নয়।