মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর শনিবার বিকেল আমার দুবার দেখার সুযোগ হয়েছে। সে দেখা তিন বছর আগের। প্রথমবার সেন্সর বোর্ড চলচ্চিত্রটির সেন্সর সার্টিফিকেট না দেওয়ায় ফারুকী গভীর মনোবেদনা নিয়ে ছবিটি আমাকে দেখার আমন্ত্রণ জানান।
ছবিটি দেখে আমার যে শুধু ভালো লেগেছিল তা–ই নয়; আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল, এটা বাংলাদেশের জন্য একটি জরুরি ছবিও বটে। প্রথমত, এটির নির্মাণশৈলী। ৯০ মিনিট দৈর্ঘ্যের শনিবার বিকেল সিনেমাটি একটিমাত্র শটে পরিচালক সম্পন্ন করেছেন অসাধারণ কুশলতায়। একদল জঙ্গির উন্মত্ততায় নিরীহ–অসহায় মানুষের প্রাণসংহার এ চলচ্চিত্রের বিষয়।
পশ্চিমের ইসলামোফোবিয়ার বিপরীতে ফারুকী সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মানবিক চরিত্র এবং জঙ্গিদের নৃশংস চরিত্র নিজস্ব স্টাইলে শনিবার বিকেল চলচ্চিত্রে তুলে ধরতে পেরেছেন। পরিচালক নির্ধারিত মিজঁসেনকে অনুসরণ করে চিত্রগ্রাহক কক্ষের সব অভিনেতার সব ক্রিয়া ফ্রেমবন্দী করেছেন দারুণ দক্ষতায়। এটি একটি অতি জটিল ও কঠিন কাজ।
কিন্তু শনিবার বিকেল দেখাকালে ক্যামেরার কসরত চোখে পড়ে না। চরিত্র ও সেটের মধ্যে ভেসে চলা ক্যামেরার চোখে যে দৃশ্য আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়, তা কঠিন বা জটিল নয়; বরং গীতল ও প্রাঞ্জল। বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্যের সূক্ষ্ম বাঁক, অভিনয়, সংগীত, ক্যামেরার পেশাদারি ও পরিচালকের নান্দনিক বোধের প্রাবল্যে ফিকশনাল রিয়েলিটি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে অনায়াসে। ছবিতে জঙ্গিদের নৃশংসতায় আমরা আতঙ্কিত হই কিন্তু ভীত হই না।
দ্বিতীয়বার ছবিটি দেখি যখন ফারুকী ছবির মুক্তির জন্য আপিল করেন। আপিল বোর্ডে আমি শনিবার বিকেল আনকাট সেন্সর দেওয়ার জন্য পরিচালক ফারুকীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরি। শনিবার বিকেল মুক্তি না দেওয়ার জন্য বোদ্ধা ব্যক্তিদের হাস্যকর যুক্তি, ‘হোলি আর্টিজানের ঘটনা নতুন করে সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার কি কোনো প্রয়োজন আছে! আর এটি দেখে জঙ্গিরা আবারও তৎপর হয়ে উঠবে’ ইত্যাদি।