বিএনপি কি বড় কোনো ঘটনা ঘটানোর মহড়া দিতে শুরু করেছে? অথবা সরকার কি বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকিতে বিচলিত বোধ করছে? এই প্রশ্ন দুটি কদিন ধরে অনেকেই আমাকে করছেন। আমি দুটি প্রশ্নের উত্তরে একটু শব্দ বলি, তা হলো ‘না’। আমার বিবেচনায় বড় কিছু ঘটানোর ইচ্ছে বিএনপির মনে মনে থাকলেও সেটা করার জন্য যে ধরনের সাংগঠনিক শক্তি, জনসমর্থন ও আন্তর্জাতিক আনুকূল্য প্রয়োজন তা নেই।
আবার সরকারও বিএনপির হুমকিতে খুব বিচলিত বলেও আমার মনে হয় না। বিশেষ করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সামান্য হুমকি-ধমকিতে বিচলিত হওয়ার মানুষ নন। অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা তার আছে। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ গ্রহণে তিনি তার সক্ষমতার পরিচয় আগে একাধিক ঘটনায় তিনি দিয়েছেন। এখনো দিচ্ছেন।
তাহলে গত ২২ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির ১৯টি কর্মসূচিতে হামলা ও বাধাদানের ঘটনা ঘটলো কেন? আমার বিবেচনায় এটা এক ধরনের সতর্কতা। বিএনপি যেভাবে সরকারকে ‘দুর্বল’ ভাবছে সরকার যে তা নয় এটা বোঝানো হচ্ছে। মাঠ খালি, বিএনপি একতরফা গোল দেবে, এমন ধারণা তাদের যেন না হয়, সেটা বোঝানোর জন্য সরকার ও সরকারি দলের উপস্থিতি জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এটা ঠিক, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি যতক্ষণ শান্তিপূর্ণ থাকবে ততক্ষণ হামলার ঘটনা না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। সব পক্ষকেই সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। মাথা গরমে ফল ভালো হয় না, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে।
বিএনপি নেতারা অবশ্য সরকার পতনের ঘণ্টাধ্বনি বহুদিন থেকেই শুনছেন। আবার সরকারি দলের নেতারা বিএনপির আন্দোলনের কথা শুনে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে বলেন, অমন আন্দোলনের কথা তো সেই কত বছর ধরেই শুনছি।
আগে বিএনপি আন্দোলন জমাতে পারেনি বলে, এখন বা অদূর ভবিষ্যতেও জমাতে পারবে না, সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না। একটা কথা ঠিক যে, দিন তারিখ ঠিক করে কোনো গণআন্দোলন হয় না। কোন ঘটনায় মানুষ পথে নামবে বা কি ঘটলে মানুষের ক্ষোভ প্রশমন করা সহজ হবে না, তা আগে থেকে বলা যায় না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে টানা তিন মেয়াদে। এই সময়জুড়েই বিএনপি সরকার হটানোর আন্দোলনের কথা বলে আসছে। এর মধ্যে দুই দফায় বেশ বড় গোলযোগ তৈরির চেষ্টা করে, বোমাবাজি, আগুন সন্ত্রাস করেও সরকারের ভিত দুর্বল করতে পারেনি। উল্টো তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন আর তাই আন্দোলনের কথা শুনলে খুব উৎসাহবোধ করে না।