ঐতিহাসিক ড. অতুল সুর ছিলেন অর্থনীতিতে ডিএসসি, আবার ইতিহাস আর নৃতত্ত্বে এমএ। তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং সুবর্ণ পদকপ্রাপ্ত ছাত্র। যাহোক, আজকের রচনার অবতারণা অতুল সুরের রচনা থেকে এ জন্য যে অতুল সুর বারবার বোঝাতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশে যাকে পানি বলে অভিহিত করা হয় এবং আমরা ভারতীয় বাঙালিরা যাকে জল বলি, সেই জলের (পানির) প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশে অসীম। কারণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, শিল্প ও বাণিজ্যে জলের এক মস্তবড় ভূমিকা থাকে।
আজ ২০২২-এর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে আসছেন তখন এই সফর এবং দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক ঘিরে দুই দেশেই তৈরি হয়েছে এক বিপুল প্রত্যাশা। এবারের বৈঠকে দুই দশের নদীভিত্তিক জল অথবা পানির বিষয়ে সমঝোতা বা চুক্তির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে।
শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে দিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়ে গেল। সেই বৈঠকে ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী ও বাংলাদেশের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সীমান্তবর্তী কুশিয়ারা নদীর উজান থেকে সেচের জন্য পানি আনতে একটি অন্তর্বর্তী সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হবে।
শুধু সীমান্তবর্তী কুশিয়ারা নদীর পানির বিষয়টি নয়, ফেনী নদী থেকে পানি উত্তোলনের স্থান এবং নকশাও ২০১৯ সালে তৈরি হয়েছিল। তার ভিত্তিতে দুই দেশেরই পানি অথবা জলসংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তায় বহু মানুষের দাবি পূরণ হতে পারে। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারতে আসবেন তখন তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে যেমন গঙ্গা আছে, তেমনি তিস্তা, মাতামুহুরী, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার, ফেনীসহ আরো কত নদীই তো রয়েছে। আসলে ফেনী নদী থেকে পানি আনার ব্যাপারে ত্রিপুরার সাবরুমের সহযোগিতাও আবার পাওয়া যেতে পারে। আবার বাংলাদেশও ভারতের বিভিন্ন নদী থেকে পানি নিয়ে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে এবং বাণিজ্যক্ষেত্রেও অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
শেখ হাসিনার এই সফরে শুধু পানি নয়—বাণিজ্য, পর্যটন, জ্বালানিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এই সফরের আগে বাংলাদেশের সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, যিনি এখন জি-২০-এর সম্মেলনের অন্যতম প্রধান, তিনি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে এই সফর যেভাবে ইতিবাচক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাতে এই পানি নিয়ে যদি চুক্তি রূপায়ণ হয়, তাহলে বাংলাদেশের জিডিপি আরো ১.৭২ শতাংশ বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এর ফলে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরো দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে এবং ছোট ছোট বিষয়কে অতিক্রম করা অনেক সহজ হবে।
কোন নেতা কী বললেন, কতটা আবেগতাড়িত হয়ে বলে ফেললেন, কতটা সুচিন্তিতভাবে কথাটা বললেন—এসব নিয়ে অহেতুক গবেষণা করাকে অযথা সময় নষ্ট বলে মনে করছেন ভারতের শীর্ষস্তরের নেতা ও মন্ত্রীরা। কারণ দুই দেশেই নির্বাচন ক্রমেই এগিয়ে আসছে। ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদির লোকসভা নির্বাচন। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নির্বাচন।