জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাচ্ছিল। খরচ কমাতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তাতেই বাংলাদেশে ফিরে এসেছে পরিকল্পিত লোডশেডিং। গত মাসের ১৯ তারিখ থেকে সরকার পরিকল্পিতভাবে আগেই জানিয়ে দেওয়া সময়ে দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনার কথা জানায়। তবে সরকার এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনায় অটল থাকতে পারেনি।
শহরে যেমন তেমন, গ্রামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলছে মানুষ। আমরা সম্প্রতি বেড়াতে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। সেখানেও দেখেছি বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা। তবে সরকার চাষীদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে গ্রামে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে সরকার অফিস সময়ের পরিবর্তন এনেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে প্রচল চাপ তৈরি হয়েছে, তার বাইরে নয় বাংলাদেশও। তাই বিদ্যুৎ খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিতে যেতে হয়েছে সরকারকে। শুধু বিদ্যুৎ খাত নয়, সব খাতেই চলছে কৃচ্ছ্রসাধনের চেষ্টা। লোডশেডিংয়ের রুটিন পুরো রক্ষা করতে না পারলেও সরকার আশা করছে শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অবশ্য এমনিতেই ঋতু বদলের পরিক্রমায় গরম কমে গেলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমে যাবে। সরকার আসলে সে আশায় বসে আছে।
অনেকদিন পর লোডশেডিং ফিরে আসায় টানা বিদ্যুতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া মানুষের জীবনযাত্রায় দারুণ প্রভাব পড়েছে। আর এই সময়ে প্রকৃতিও অনেক কঠোর। তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ে হাঁসফাঁস জনজীবনে। তাই বাজারে বেড়ে গেছে আইপিএস, রিচার্জেবল ফ্যান-লাইটের চাহিদা। আধুনিক ফ্ল্যাটে জেনারেটর চালাতে বেড়েছে ডিজেলের চাহিদা। সব মিলিয়ে মানুষও অপেক্ষার প্রহর গুনছে, কবে এই ভাদ্র মাসের তালপাকা গরম কমবে।
সরকার আগের দিনই কখন, কোথায়, কতক্ষণ লোডশেডিং হবে তার তালিকা দেওয়ার কথা। হয়তো দেওয়া হচ্ছেও। আমি খেয়াল করিনি। কোন এলাকায় কখন, কতক্ষণ লোডশেডিং হবে তারও নিশ্চয়ই একটা তালিকা আছে, প্রায়োরিটি আছে। লোডশেডিংয়ের তালিকায় মন্ত্রীপাড়া আছে কি না আমি জানি না। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমি তো বলি মন্ত্রীর বাড়িতেও লোডশেডিং করা হোক। প্রধানমন্ত্রী এটা করলে আমি তাতে সমর্থন দেব। আমাদের মন্ত্রীদের বাড়িতেও লোডশেডিং হতে পারে। জনগণের বাড়িতে লোডশেডিং হলে মন্ত্রীর বাড়িতে, এমপির বাড়িতে কেন হবে না। যেটা যুক্তিযুক্ত সেটাই আমাদের করা উচিত।’
অবশ্য পরদিনই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছেন, মন্ত্রীদের বাড়িতেও লোডশেডিং করা হয়। আমার ধারণা দুজনই সত্যি বলছেন। হয়তো মন্ত্রীদের বাসায়ও লোডশেডিং করা হয়। কিন্তু জেনারেটর থাকায় হয়তো ওবায়দুল কাদের সেটা টের পাননি। আমি দুই মন্ত্রীকেই ধন্যবাদ জানাই- মন্ত্রীদের বাসা লোডশেডিংয়ের তালিকায় রাখায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে আর মন্ত্রীদের বাসায় লোডশেডিং দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় সেতুমন্ত্রীকে।