যেকোনো ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা পাওয়ার জন্যই খুলতে হয় অ্যাকাউন্ট। প্রতিটি অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ই সেবাগুলো মনে করিয়ে দেয় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা। কেননা সহজেই অনুমান করা গেলে যে কেউ এসব অ্যাকাউন্টে ঢুকে সেসবের দখল নিয়ে নিতে পারবে। সমস্যা শুরু সেখানেই।
বর্তমানে যেসব ব্যবহারকারী ইন্টারনেটে তেমন সময় ব্যয় করে না, তাদেরও অন্তত ২০টি সেবার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর বেশির ভাগ ব্যবহারকারীর রয়েছে কয়েক শ অ্যাকাউন্ট। এত অ্যাকাউন্টের লগ ইন পাসওয়ার্ড আলাদাভাবে মুখস্থ রাখা প্রায় অসম্ভব। ফলাফল একই পাসওয়ার্ড একাধিক জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে হ্যাকারদের জন্য অ্যাকাউন্ট দখল করা হয়ে যাচ্ছে সহজ।
ওয়েবের শুরু থেকেই চলে আসা পাসওয়ার্ড প্রযুক্তিকে পেছনে ফেলে আরো নিরাপদ ও সহজ অ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে মূল তিনটি প্রযুক্তি কম্পানি—গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল। তারা মিলিতভাবে পাসওয়ার্ডবিহীন নিরাপদ ওয়েব তৈরির লক্ষ্যে একত্রে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। এত দিন কম্পানিগুলো এ বিষয়ে কাজ করছিল আলাদাভাবে। ফলে ওয়েবসেবা প্রদানকারীদের একাধিক সিস্টেম সাপোর্ট করার ঝামেলা পোহাতে হচ্ছিল। ফলে ওয়েবসাইটগুলো বেশির ভাগ সময়ই নতুন প্রটোকলের বদলে পুরনো পাসওয়ার্ড সিস্টেমই ব্যবহার করে আসছে।
বর্তমানে উইন্ডোজ ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ, অ্যাপলের প্রতিটি ডিভাইস এবং গুগলের অ্যানড্রয়েড ও ক্রোমওএস মেশিনগুলোর প্রতিটির মধ্যেই আছে নিরাপদ তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য বিশেষ হার্ডওয়্যার, যাকে ‘সিকিউর অনক্লেভ’ বলা হয়ে থাকে। এই চিপের মধ্যে থাকা তথ্য অপারেটিং সিস্টেম বা অন্য কোনো সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার সরাসরি পড়তে পারে না। বরং মূল সিস্টেম ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্তকারী কোনো ইনপুট, যেমন—ফেস স্ক্যান, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা পিন কোড সিকিউর অনক্লেভে পাঠিয়ে দিতে পারে। পরিচয় যাচাই করে এরপর সিকিউর অনক্লেভ তার মধ্যে থাকা গোপনীয় তথ্য এনক্রিপ্ট করে তবেই অপারেটিং সিস্টেমকে জানায়। প্রতিবার তথ্য নতুন করে এনক্রিপ্ট হয়ে থাকে, ফলে দেখে বোঝার উপায় নেই কোন তথ্য কী রূপে সিকিউর অনক্লেভ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। শুধু সেই তথ্য যে সেবার জন্য ব্যবহার্য, সেখানেই সেটি ডিক্রিপ্ট করার কি (key) দেওয়া থাকে। ফলে যদি ব্যবহারকারীরা অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগ ইন করার জন্য নিজের মনগড়া পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে, বরং সিকিউর অনক্লেভের মাধ্যমে ওয়েবসেবাটিতে অ্যাকাউন্ট খোলে, তাহলে সরাসরি সেই চিপের সঙ্গে ওয়েবসেবার সংযোগ তৈরি হবে, আর সার্ভারের সঙ্গে কি আদান-প্রদানের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করে দেবে সিকিউর অনক্লেভ চিপ। ফলাফল সরাসরি বায়োমেট্রিক সিস্টেম বা পিন কোড ব্যবহার করেই, অনলাইনে কোনো পাসওয়ার্ড মনে রাখার ঝক্কি ছাড়াই ব্যবহারকারীরা নিরাপদে সেবার জন্য অ্যাকাউন্ট করতে পারবে। এর আগে সিস্টেমটি প্রতিটি প্ল্যাটফরমের জন্য আলাদা ছিল, এখন তিন প্রযুক্তি জায়ান্ট একত্রে কাজ করবে, যাতে একই ব্যবহারকারী একাধিক প্ল্যাটফরমে একই সেবা ব্যবহার করতে পারে ঝামেলা ছাড়াই। অর্থাৎ পিসিতে বসে ক্রোম ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট করলে, ম্যাক থেকে একই পিন কোড বা বায়োমেট্রিক সাইন ইন ব্যবহার করে সেবাটি সাফারি ব্রাউজার দিয়েও ব্যবহার করা যাবে, আবার অ্যানড্রয়েডেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েই একই সেবায় করা যাবে লগ ইন। প্ল্যাটফরমের বাধ্যবাধকতা থাকছে না।