জেআরসি বৈঠকের চাওয়া ও পাওয়া

সমকাল শেখ রোকন প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:৪৮

ভারতের নয়াদিল্লিতে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জেআরসি তথা যৌথ নদী কমিশনের ৩৮তম বৈঠক ঘিরে বাংলাদেশের দিক থেকে প্রত্যাশার পারদ স্বাভাবিকভাবেই অনেক ওপরে ছিল। কারণ, ৩৭তম বৈঠকটি হয়েছিল পাক্কা এক যুগ আগে- ২০১০ সালের মার্চ মাসে। যৌথ নদী কমিশনের কার্যবিধি অনুযায়ী বছরে অন্তত চারটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে গত ৫০ বছরে মাত্র ৩৮টি বৈঠক সম্ভব হলো। স্বীকার করতে হবে- সংখ্যা নয়, এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় ফোরামের মূল বিষয় কার্যকারিতা। দুর্ভাগ্যবশত, সেক্ষেত্রেও যৌথ নদী কমিশনের ব্যর্থতা মহাকাব্যিক। সর্বশেষ বৈঠকেও 'সাফল্য' হিসেবে অভিন্ন নদী কুশিয়ারার পানি প্রত্যাহারের যে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে- এ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। বস্তুত আমাদের মতো নদীকর্মীদের জন্য গোটা বৈঠক নিয়েই রয়েছে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার হতাশা ও আক্ষেপ।


কী ছিল আমাদের প্রত্যাশা? জেআরসির এবারের তিন দিনব্যাপী বৈঠক ২৫ আগস্ট মন্ত্রী পর্যায়ের সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল। প্রথমদিন ২৩ আগস্ট ছিল সচিব পর্যায়ের বৈঠক। তার আগের রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 'দেশটিভি' আয়োজিত টকশোতে অংশ নিয়ে প্রত্যাশার কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছিলাম।


দীর্ঘমেয়াদি বিষয় হলেও খোদ জেআরসির গঠনতান্ত্রিক গলদ দূর করার কথা বলেছিলাম। যেমন বাংলাদেশ ও ভারতের নদীগুলোর অববাহিকাভুক্ত অন্য তিন দেশ চীন, নেপাল, ভুটানকেও কমিশনের অন্তর্ভুক্ত করা। যেমন কার্যবিধিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা ও পূর্বাভাস, সেচ প্রকল্পসংক্রান্ত কার্যক্রমের কথা থাকলেও 'পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে যে কোনো কার্যক্রম' গ্রহণের কথা ছাড়া দলিলটির কোথাও সরাসরি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বা অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়নি। যেমন ভারত-পাকিস্তান যৌথ নদী কমিশনেও বিরোধ মীমাংসার জন্য তৃতীয় পক্ষের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনে এই সুযোগ নেই। যেমন নামে 'যৌথ' নদী কমিশন হলেও, দুই দেশের যৌথ জনবল কাঠামো নেই। বৈঠকে দেখা হওয়া ছাড়া বাকি সময় যদি 'হিজ হিজ, হুজ হুজ' হয় তাহলে কমিশনটি 'যৌথ' হয় কীভাবে? যেমন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকঙ রিভার কমিশনের জন্য যৌথ জনবল কাঠামো রয়েছে।


আগেই জানতাম, এবারের জেআরসি বৈঠকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি এবং একই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপির নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের যে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের পক্ষে যোগ দিয়েছে, সেখানে পানিসম্পদ সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও পানিসম্পদ ও অভিন্ন নদী সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। ফলে এই প্রত্যাশাও ছিল যে- চূড়ান্ত হোক না হোক, আলোচনার টেবিলে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসংক্রান্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়গুলো তোলা হবে। কারণ, জেআরসির কার্যবিধিতে যদিও কমিশনটি গঠনের একাধিক উদ্দেশ্য বর্ণিত রয়েছে, মূল বিষয় যে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, এ ব্যাপারে প্রশ্ন নেই। কারণ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে 'দাপ্তরিকভাবে স্বীকৃত' অভিন্ন নদীর সংখ্যা যদিও অর্ধশতাধিক, গত অর্ধশতাব্দীতে এই ফোরামে চারটির বেশি নদীর পানি বণ্টনের আলোচনা চূড়ান্তই করা যায়নি।


আমরা জানি, কয়েক দফা 'অ্যাডহক' বা সাময়িক সমঝোতা স্মারকের পর ২০১১ সালে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ১৫ বছর মেয়াদি একটি 'অন্তর্বর্তীকালীন' চুক্তি চূড়ান্ত করে দুই দেশের সরকারপ্রধানের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রাখা হয়েছিল। কথা ছিল ওই বছর সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে। দৃশ্যত শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির মুখে সেটা সেই যে ঝুলে রয়েছে, এক দশক পরেও নামিয়ে আনা যায়নি। যদিও এর নেপথ্য 'রাজনীতি' নিয়ে নানা কথা শোনা যায়।


প্রত্যাশা ছিল, এবারের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিটি স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের পক্ষে যে সংবাদবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে অবশ্য বলা হয়েছে- 'দীর্ঘদিন অনিষ্পন্ন থাকা তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ পক্ষ অনুরোধ করেছে। চুক্তিটি সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর ব্যাপারে আশ্বস্ত করে ভারতীয় পক্ষ।' যদিও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে তিস্তা চুক্তিবিষয়ক এই আলোচনার বিন্দু- বিসর্গও নেই।


একই কথা বলা চলে গঙ্গার ক্ষেত্রে। জেআরসির অন্তত দুই দশকের প্রযোজনায় ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে- 'গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের প্রাপ্ত সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার ব্যাপারে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।' বিষয়টি বিস্ময়কর বটে। যেখানে অভিন্ন নদী গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা, সেখানে শুধু বাংলাদেশের প্রাপ্ত পানি ব্যবহার নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অর্থ কী? ভারতীয় পক্ষের বিবৃতিতে 'যথারীতি' গঙ্গা নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করা হয়নি।


ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে স্পষ্ট- দেশটির সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ফেনী নদী নিয়ে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে মূলত দিল্লির আগ্রহে ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য। ঢাকা এটা এখনও অনুস্বাক্ষর করেনি সংগত নানা কারণে। ভারতীয় পক্ষ বলছে- 'ফেনী নদী থেকে পানি উত্তোলনস্থলের নকশা ও এলাকা চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি দুই পক্ষই স্বাগত জানিয়েছে'। অনুমিতভাবেই বাংলাদেশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এর উল্লেখ নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us