দানব হয়েছে মূল্য-সন্ত্রাস

আজকের পত্রিকা ড. মো. ফখরুল ইসলাম প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২২, ২০:০৬

খুব অল্পদিনের মধ্যে দানব হয়ে উঠেছে দ্রব্যমূল্য। এই দানব ফ্রাংকেনস্টাইনের আলোচিত ভয়ংকর দানবকে হার মানিয়েছে। মেরি শেলির উপন্যাস ‘ফ্রাংকেনস্টাইন অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস’-এর এক বিখ্যাত চরিত্র বিজ্ঞানী ফ্রাংকেনস্টাইন। যিনি নিজের গবেষণায় বিশেষ ধরনের বিজ্ঞান আয়ত্ত করেন। যার মাধ্যমে মৃত আত্মাকে জীবনদান করা সম্ভব হয়। এ পরীক্ষাটি এ জন্য, মৃত ব্যক্তির ওপর করলে মৃত ব্যক্তিটি বেঁচে ওঠে কিন্তু পরিণত হয় এক ভয়ংকর দানবে। এই দানব দেখতে ছিল কুৎসিত। তাকে দেখে ফ্রাংকেনস্টাইন ভয় পেয়ে দুর্ব্যবহার করলে সে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু করে। দানবটি ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে, তার পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের হত্যা করতে থাকে। একদিন ফ্রাংকেনস্টাইনকেই হত্যার জন্য ধাওয়া করলে সে দৌড়ে বনের মধ্যে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। কিন্তু নির্জন বনে মারা যায়। ফ্রাংকেনস্টাইনের মৃত্যুর সংবাদ জানার পর দানব আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একদিন চিরতরে হারিয়ে যায়। তাকে আর কোনো দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।


বলা হচ্ছে, করোনার প্রভাব, ইউক্রেন যুদ্ধ, দাবানল, বন্যা, মাঙ্কিপক্স, তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বিশ্ববাণিজ্য ও আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপণ্যের বাজারদরে আগুন লেগেছে। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় ধস নেমেছে চারদিকে। দরদামের দুর্যোগ নেমে সুযোগসন্ধানী মূল্য-সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সৃষ্ট দানব চরিত্রের মৃত আত্মা পুনরুজ্জীবন লাভ করে ক্রমান্বয়ে শক্তি সঞ্চারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়েছে বাজারের সবকিছু। দখল করে ফেলে গোগ্রাসে চারদিকের সবকিছুকে খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে যেন।


এবার শুধু লোভী ব্যবসায়ী নয়, নেমে পড়েছে সুযোগসন্ধানী মূল্য-সন্ত্রাসী দানবরা। তারা কাউকে ভয় করে না। বাজারে কত নামে, কত আবরণে, কত আভরণে কতশত নিয়ন্ত্রক টিম নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। নিত্যপণ্য মূল্যের মনিটরিং চলছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ছেড়ে দেওয়া পাগলা ঘোড়াকে কোনোভাবে বেড়ি পরানো যাচ্ছে না। সবাই যেন একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়ে কাল্পনিক দানবকে দোষারোপ করে পার পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে কেউ শিগগির পার পাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। এই নাজুক অবস্থা আর কত দূর, কোথায় গিয়ে থামবে—তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। আক্ষেপ করছেন প্রতিদিনের খাবারের বাজেটে কাটছাঁট করতে থাকা স্বল্প আয়ের নিরীহ মানুষগুলো।


তেমনি একজন আমাদের প্রতিবেশী। তাঁর নাম বলা হলো না। তবে তিনি কাজপাগল। সবার আগে অফিসে আসা এবং সবাই অফিস শেষে চলে যাওয়ার পর তাঁকে বাসায় ফিরতে হয়। তাঁর পরিবারে অনেকে আছেন। তাঁরা নিজেরা অতিব্যস্ত থাকেন। তাই তাঁর খোঁজখবর ঠিকমতো নিতে পারেন না আপনজনেরা। খুব সকালে এসে অফিসের তালা খুলে সবকিছু গুছিয়ে রেখে তিনি সকালের নাশতা সারেন দুটি রুটি ও সবজি ভাজি দিয়ে। কোনো কোনো দিন ডাল-পরোটা খান। বছর দুয়েক আগে পরোটার দাম ছিল ৫ টাকা। ২০ টাকায় নাশতা হয়ে যেত। এখন ৫০ টাকায়ও টানাটানি হয়।


দুপুরের খাবারে তাঁর পছন্দ খিচুড়ি ও একটি ডিম ভাজা। এক প্লেট খিচুড়ি ও একটি মুরগির ডিম এক বছর আগেও ৩০  টাকায় পাওয়া যেত। সেটা অফিসের কাছাকাছি অস্থায়ী খোলা দোকানে।


এরপর ছয় মাস আগে হঠাৎ একদিন ৫০ টাকা হয়ে গেল। কারণ, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছিল তখন। গত কয়েক দিন একই খাবারের মূল্য ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একটি ডিম ভাজার দাম বেড়ে নাকি ২০ টাকা হয়েছে! এ জন্য তিনি খুব নাখোশ।


তাঁর কথা হলো, ডিম, দুধের সাদা বিপ্লব কি শেষ হয়ে গেল? তাঁর বয়স অনেক হয়েছে। আগের মতো ভারী কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘ সময় কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তিনি ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার তাঁকে শরীরে বাড়তি শক্তির জন্য প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে বলেছেন। তাই তাঁর নিয়মিত ডিম খাওয়া দরকার। কিন্তু ডিমের দাম বেড়ে গেল, এটা কেমন কথা? এটা তিনি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। তাঁর কথায়, কারও খারাপ অবস্থা থেকে আরও খারাপ হলে মেনে নেওয়া সহজ। কিন্তু একবার একটু ভালো অবস্থা হলে সেখান থেকে আবার খারাপের দিকে যাওয়া খুব কষ্টের। ডিমের মতো প্রিয় খাবারের দাম হঠাৎ এত বেশি হয়ে যাবে, সেটা তাঁর কোনো দিন মাথায় আসেনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us