প্রতি বছর ২১ আগস্ট আসে। মাথায় ঘোরে একটা প্রশ্ন। কেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা হলো? কেন এমন নৃশংসতা? রাজনৈতিক জায়গা থেকে দেখলে, এটি অবশ্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা।
১৯৭৫-এ বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে তার দলের পুরো নেতৃত্বসহ হত্যার পরিকল্পনা ছিল ২০০৪ সালের এই গ্রেনেড হামলা। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলও ২৪ জন নিহত হন সেই দিনের হামলায়।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংসদের বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে এমন সংঘটিত আক্রমণ ইতিহাসে বিরল। ক্ষমতায় ছিল বিএনপি এবং দায় তাদেরই নিতে হবে। কারণ খুব স্পষ্ট—প্রথম থেকেই আক্রমণের শিকার মানুষ আবারও আক্রমণ করেছে পুলিশ, হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেয়নি বিএনপি নিয়ন্ত্রিত চিকিৎসকেরা, আলামত ও তথ্য প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে দ্রুততম সময়ে এবং হত্যাকারীদের আড়াল করতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় মিথ্যা সাক্ষী জজ মিয়া নাটক করা হয়েছে।
জামায়াত-বিএনপি জোট ২০০১-এর নির্বাচনে জেতার পর দেশব্যাপী ধর্ষণের উৎসব করেছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন চালিয়েছে মাসের পর মাস, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
পুরো শাসন ব্যবস্থা ছিল নৈরাজ্যপূর্ণ। একের পর এক সন্ত্রাসী ও সহিংস ঘটনা ঘটছিল। তবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ তার দলের পুরো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিলীন করে দেওয়ার জন্য যে কাজ করেছিল, তার নজির আর কোথাও নেই।
আমরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা বলছি। কিন্তু দুর্বৃত্তের রাজনীতিকীকরণ প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছিল ২০০১ সালে। কী ঘটেছিল সেদিন সেটা দেখতে একটু ফেরা যাক ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট, শনিবার বিকেলে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে জড়ো হয়েছিলেন সিনিয়র নেতারা। দলটির প্রধান ও তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা ছিলেন ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি। নেত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করেই বিকট শব্দ।
সাংবাদিকদের বর্ণনা অনুযায়ী, ১২টির বেশি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছিল। আরও কয়েকটি গ্রেনেড অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে ছিল। তাৎক্ষণিক মারা যায় ২৩ জন নেতাকর্মী।