আজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি নায়িকা শবনমের জন্মদিন। তিনি সেই চিত্রতারকার একজন যিনি একটি যুগের সূচনা করেছেন। অভিনয় করেছেন মনে রাখার মতো অনেক চলচ্চিত্রে। দেশের গ-ি পেরিয়ে অনেকেই এখন পাড়ি দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আর শবনমের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের এই তরুণী হয়ে উঠেছিলেন পাকিস্তানের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকা। সেখানকার সম্মানজনক ‘নিগার অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্তিতে এখনো এই নায়িকার রেকর্ড রয়েছে। বহুবছর তিনি রূপালী পর্দা থেকে দূরে, কিন্তু তার পাওয়ারফুল অভিনয়ের জন্য আজও তিনি দর্শক ভক্তের মনে সমানভাবে জায়গা নিয়ে আছেন। যদিও তিনি স্বভাবগতভাবে নিভৃতচারী। তারপরও খোঁজ খবর রাখেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের। মাঝে মধ্যে তার দেখা মেলে চলচ্চিত্র বিষয়ক আয়োজনে। তিনি অভিভাবকের ছায়া হয়ে আছেন ঢালিউডের অভিনয়শিল্পীদের কাছে।
একটা সময় ছিল যখন শবনমকে বাংলাদেশের দর্শক ‘হারানো দিন’, ‘চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘নাচের পুতুল’-এর নায়িকা হিসেবেই বেশি চিনতেন। তারপর অবশ্য তিনি বাংলাদেশের ‘সন্ধি’, ‘শর্ত’, ‘সহধর্মিণী’, ‘যোগাযোগ’, ‘জুলি’, ‘বশিরা’, ‘দিল’সহ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার পরবর্তী সময়, অর্থাৎ ১৯৯৯ সালের ২৫ জুন কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে আজ অবধি দর্শক তাকে ‘আম্মাজান’ হিসেবে খুব সহজেই চেনেন। দীর্ঘদিন তিনি পাকিস্তানের সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিধায় অনেকেই আবার মনে করতেন তিনি পাকিস্তানের নায়িকা। কিন্তু এই ধারণাও ভুল ছিল। তার আসল নাম ঝরনা বসাক। আজ ১৭ আগস্ট, কিংবদন্তি এই নায়িকা ৭৫ পেরিয়ে ৭৬-এ পা রাখছেন। নিজের বয়সের কথা অকপটেই স্বীকার করেছেন শবনম। ‘আম্মাজান’-এর পর আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি শবনমকে। এরই মধ্যে বেশ কয়েক বছর আগে তিনি হারিয়েছেন স্বামী বরেণ্য সুরস্রষ্টা, সংগীত পরিচালক রবিন ঘোষকে। একমাত্র ছেলে রনিকে নিয়েই তিনি রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় বসবাস করছেন। কী করবেন এবারের জন্মদিনে এমন প্রশ্ন করতেই শবনম বলেন, ‘দেখতে দেখতে তো ৭৫টি বছর পার করে দিলাম। অথচ এখনো মনে হয় এই তো সেদিনের কথা, বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটছে, স্কুলে যাচ্ছি, ফিল্ম করছি। আর এখন ভাবলে মনে হয় কত সময় চলে গেছে জীবন থেকে। জীবনের কত রূপ দেখেছি, নানান বয়সে জীবনের সৌন্দর্যকে উপভোগ করেছি। কত শত মানুষের সঙ্গে পরিচয়, কত কিছু শিখেছি এক জীবনে, কত কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আবার হারিয়েছিও অনেক প্রিয়জনকে। সত্যি বলতে কি, মৃত্যু পর্যন্ত জীবন সুখ-দুঃখের খেলা। এখনো সুস্থ আছি, ভালো আছি এটাই কম কিসের। বয়স তো আর কম হলো না। এই বয়সে জন্মদিন নিয়ে উচ্ছ্বাস নেই। শুধু একমাত্র ছেলে রনিকে সঙ্গে নিয়ে হয়তো বাসার বাইরে কোথাও গিয়ে মা-ছেলে মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করব। সবার দোয়া ও ভালোবাসা চাই।’