৬. সাড়ে ন’য়ের সকালে এজলাসে ওঠার এ-টাইমিংটা চালু হয় ১৯৯৭-এর জুনে, সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন হওয়ার দিন থেকে। দশটা-পাঁচটা অফিস টাইম, দেড় দিন ছুটি সপ্তাহে দিব্যি চলে আসছিল বাঙালির সে কোন আদিকাল থেকে। ১৯৯৭-এর জুনে এসে সেটা বদলে করা হলো ন’টা-পাঁচটা। দিনে কর্মঘণ্টা বাড়ল এক ঘণ্টা। পুষিয়ে দিতে সাপ্তাহিক ছুটি বাড়ানো হলো পুরো দুদিনে। তলে তলে যে একটা ঘণ্টা বেড়ে গেল সপ্তাহের কর্মঘণ্টা! সরকার ছিল তবে এই তালে! বাঙালিকে বোকা বানাতে পেরেছে কে কবে! ‘লেট লতিফ’-রা ছিল সেই দশটা-পাঁচটার শুরু থেকে। কালে কালে বেড়েছে তারা দলে দলে। ‘লেট লতিফ’ বাছতে যখন অফিস উজাড় তখন বললেই কি অফিস জমে উঠবে ন’য়ের সকালে! ওঠেনি যে তা কি আর দেখিয়ে দিতে হবে চোখে আঙুল দিয়ে (কারবারের ফিকিরে থাকা দোকানিও দোকান খোলে না বেলা এগারোটার আগে)! দুদিন ছুটির পুরোটা কাটায় মহা আরামে।
সেই আরাম হারাম করে রবিবারে অফিস আসতে বেলা বারোটা বাজে। বৃহস্পতিবার দুপুরেই হুড়োহুড়ি শুরু আন্তঃজেলা বাসে-ট্রেনে, লঞ্চে-প্লেনে। হয়েছে কর্মের ঘণ্টা! সরকারি নতুন অফিস টাইমের খাপে খাপ মিলিয়ে কোর্টের টাইমও বাঁধা হলো ন’টা-পাঁচটায়, হাইকোর্টের সার্কুলারে। এজলাসে ওঠার ধরাবাঁধা টাইমটা সাড়ে দশটা থেকে নামিয়ে বাঁধা হলো সাড়ে ন’য়ে। সাড়ে দশের কালেই উকিল-মক্কেল-মোহরার হাজির পাওয়া ভার হতো এজলাসে, ওঠার ধরাবাঁধা টাইমটা যা হোক করে ঝুলে ছিল শুধু জেলা জজের কোর্টে। সাড়ে ন’য়ে এসে সেটাও পড়ল খসে। সিনিয়র-জুনিয়র নিমরাজিও নন কেউ সাড়ে ন’য়ের সকালে জেলা জজেরও এজলাসে হাজির থাকতে! কাজ হলো না টানাটানি করে। কোর্টের ওঠাউঠি যথারীতি রইল আগের সেই আবদারি টাইমেই। ধরাবাঁধা নতুন টাইমটা এবার জেলা জজেরও ঠেকল গিয়ে শুধু কেতাবে। কোর্টের ডায়েরিতে তার ওঠার টাইম সাড়ে নয় লিখতে হয় রোজ রোজ মিথ্যে করে। মিথ্যেটাকে একটুখানি সত্য করে দেখাতে জেলা জজরা প্রথম প্রথম চেষ্টা করেন সাড়ে ন’য়ের সকালে কোট-গাউনে সেজে জনশূন্য এজলাসেই মিছেমিছি উঠে বসে থাকতে। উকিল সাহেবরা বিপদ ভেবে বাদ সাধেন তাতেও। না পেরে শেষে তারা (দু-চারজন বাদ থাকলেও থাকতে পারেন) শুরু করেন সাড়ে ন’য়ের সকালে টুক করে (খোদাকে দেখাতে!) এজলাসে উঠেই অমনি ঝট করে (উকিল সাহেবরা দেখে ফেলার আগেই!) নেমে আসা! উকিল সাহেবরা হাজির হলে আবদারি টাইমে আবার ওঠেন বীরদর্পে!